আলোচিত শাহাদাত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ৩
চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ক্লুলেস শাহাদাত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে হত্যার মূলহোতা ও পরিকল্পনাকারী জাহিদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
এর আগে বুধবার সকালে ঢাকার ধামরাই থানার আমরাইল এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদ, আবু তাহের ও সবুজ হোসেন।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে স্বীকার করেছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত বছরের ১ আগস্ট ঢাকার ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের শাহাদাত নামে এক যুবক কালিয়াকৈরে তার কর্মস্থলে যান। সেখানে গত ৪ আগস্ট থেকে বাড়ির সঙ্গে তিনি কোনো যোগাযোগ করেননি। গত ৬ আগস্ট থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় গত ৮ আগস্ট কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার পরিবার। গত ১২ আগস্ট ধামরাইয়ের আমরাইল গ্রামের একটি কাঠ বাগান থেকে নিখোঁজ শাহাদাতের অর্ধগলিত ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, ওই ঘটনায় ঢাকার ধামরাই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভিকটিম শাহাদাতের মা বাদী হয়ে ধামরাই থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব জানায়, ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ধামরাই থানা পুলিশ গত ৩০ সেপ্টেম্বর শাহাদাতের বন্ধু জাহিদকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে জাহিদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান না করায় রিমান্ড শেষে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। র্যাব ওই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়াতদন্ত শুরু করে। এরপর র্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৪ এর একটি চৌকস অভিযানিক দল আশুলিয়া থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
কমান্ডার মঈন বলেন, ভিকটিম শাহাদাত ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের কোহিনুর ইসলামের ছেলে। ভিকটিম কালিয়াকৈর উপজেলার বারইপাড়ায় একটি প্রতিষ্ঠিত কারখানার কর্মচারী ছিলেন। গত ১৪ আগস্ট গ্রেপ্তার জাহিদের প্রেমিকার সঙ্গে শাহাদাতের বিয়ের দিন ধার্য ছিল। নিজের প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে জাহিদ মেনে নিতে না পারার জের ধরে গ্রেপ্তারকৃত তার অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে পরিকল্পনা করে শাহাদাতকে হত্যার নকশা আঁকে।
র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম ও গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা সবাই ধামরাই থানাধীন মাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। এ সর্ম্পকের কারণে তাদের মধ্যে সচারচর সাক্ষাত হতো এবং তারা একত্রিত হয়ে ভাড়া বাসা ও নিজ এলাকায় জুয়ার আসর বসাতো।
মঈন বলেন, বিগত ৩ আগস্ট শাহাদাতকে চন্দ্রা থেকে গাজীপুর জেলার কাশিমপুরের কাছে মাটির মসজিদ এলাকায় ডেকে নিয়ে আসা হয়। এক পর্যায়ে আসামিরা তাকে ফুসলিয়ে জুয়া খেলতে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে ভুক্তভোগীকে ফুসলিয়ে দু’দিন অবস্থান করান।পরবর্তীতে ৬ আগস্ট সন্ধ্যার সময় সবাই একত্রে ভুক্তভোগীকে নিয়ে ধামরাইয়ের আমরাইল এলাকায় ভাড়া বাসায় আসেন। সেখান থেকে আশুলিয়া থানাধীন একটি ফাঁকা নির্জন এলাকায় নিয়ে শাহাদাতের হাত পা বেঁধে ফেলেন। লাঠি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারপর গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা শাহাদাতের মরদেহ ভ্যানচালক সবুজের ভ্যানযোগে ধামরাই থানাধীন আমরাইল পুকুরিয়ার কাছে মনুমিয়ার কাঠবাগানের কাছে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে গাছের একটি ডালে কাঁচা পাট দিয়ে ফাঁস তৈরি করে ঝুলিয়ে রাখেন, যাতে করে এলাকার লোকজন জানতে পারে এটি একটি স্বাভাবিক আত্মহত্যা।
আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/আরএ/