গৃহকর্মী নিয়োগের আগে ডিএমপির ৫ সুপারিশ ও ৯ নির্দেশনা
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫ সুপারিশ ও ৯ নির্দেশনা জানিয়েছে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের একটি সূত্র এসব তথ্য জানান।
গত বুধবার কাজের লোকের হাতে আফরোজা বেগমের খুন হওয়ার ঘটনায় মো. বাচ্চু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারের পর পিবিআই বলেছে, দশ বছর ধরে আফরোজা বেগমের বাসায় কাজ করছে সে। এক পর্যায়ে আফরোজা বেগমের অর্থ সম্পদের প্রতি তার লোভ জন্মায়। পরে চুরি করার কৌশল খুঁজতে থাকে।’
২০১৯ সালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আলোচিত জোড়া খুনের নেপথ্যে ছিল পুরনো গৃহকর্মীর ষড়যন্ত্র। অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করতেই মূলত এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার পর সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত সতর্ক করতে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশের বিশেষ ইউনিট।
পিবিআই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। এরপর তারা গৃহকর্মী (গৃহপরিচারক-পরিচারিকা) নিয়োগের জন্য ৬ টি সুপারিশ জানায়।
সেগুলো হলো- গৃহকর্মী নিয়োগের আগে নাম-ঠিকানা যাচাই করতে হবে, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিতে হবে, অপরিচিত কাউকে হঠাৎ বাসায় কাজের লোক হিসেবে না নেওয়া, দীর্ঘদিনের কাজের লোককে অতিরিক্ত বিশ্বাস না করে তার দিকে নজর রাখা, মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে যাচাই করা, মোবাইলে ছবি তুলে রাখা।
এর ধারাবাহিকতায় গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আজ মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ১৪টি সুপারিশ জানিয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ থেকে প্রকাশ করা সুপারিশগুলো হচ্ছে- ১) কাজের বুয়া-কাজের লোক নিয়োগের আগে তার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, সদ্য তোলা রঙিন ছবি, শনাক্তকারী ব্যক্তি, ব্যক্তির পরিচয় ও তার জাতীয় পরিচয়পত্র নিন। ২) সব তথ্য নেওয়ার পর নিকটস্থ থানায় কাজের বুয়া-কাজের লোকের তথ্য দিন এবং নিজের কাছে রাখুন। এর ফলে সে অতীতে কোনো অপরাধ করে থাকলে পুলিশ তাকে সহজেই শনাক্ত করতে পারবে। ৩) অতীতে সে কোথায় কাজ করেছে তার বিস্তারিত তথ্য নিন এবং কাজ ছাড়ার কারণ জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে পূর্বের কাজের ঠিকানায় যোগাযোগ করে তার তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। ৪) কাজের বুয়া-কাজের লোকের পরিবারের তথ্য নিন। তার স্থায়ী ঠিকানা ও পরিবারে কে কে আছে তা জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে তার স্থায়ী ঠিকানায় যোগাযোগ করে দেখতে পারেন, সে আসলে ওই ঠিকানায় বসবাস করে কি না। এত কিছু খোঁজখবর অনাবশ্যক মনে হতে পারে, কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হলে তখন আফসোস হবে। ৫) বর্তমানে ডিএমপি নগরীর সব মানুষের তথ্য সংরক্ষণে কাজ করছে। ডিএমপি কর্তৃক নির্ধারিত তথ্য ফরমে আপনার কাজের বুয়া-কাজের লোকের তথ্য পূরণ করে থানায় জমা দিন।
তা ছাড়া কাজের বুয়া-কাজের লোক নিয়োগের পরে ডিএমপির দেওয়া ৯টি নির্দেশনা হলো- ১) নিয়োগের পর তার গতিবিধি লক্ষ্য করুন। তার আচরণ আপনি বুঝতে পারবেন সে আসলে কেমন ব্যক্তি। ২) বাসার মেইন গেটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে পারেন। এতে করে আপনার বাসায় কোনো অপরিচিত লোকের আনাগোনা হচ্ছে কি না, তা দেখা সহজ হবে। প্রয়োজনে ঘরের ভেতরেও সিসি ক্যামেরা লাগানো যেতে পারে। যাতে আপনার অনুপস্থিতিতেও কাজের বুয়ার কর্মকাণ্ড মনিটর করতে পারেন। ৩) বাসায় মূল্যবান জিনিসপত্র, স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা কাজের বুয়া-কাজের লোকের অগোচরে রাখুন। আপনার লকারের চাবি সব সময় আপনার কাছে রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে যে রুমে লকার-আলমারি রয়েছে, সে রুম আলাদাভাবে তালাবদ্ধ করে রাখুন। ৪) কাজের বুয়া-কাজের লোককে একা রেখে সবাই বাড়ি ছেড়ে যাবেন না। বাচ্চা রেখে গেলে সঙ্গে আরও একজনকে রাখুন। কোনো অবস্থাতেই বাচ্চাকে একা রেখে যাবেন না। ৫) কাজের বুয়ার চাহিদা বোঝার চেষ্টা করুন। তাতে করে সে লোভী কি না জানতে সহজ হবে। ৬) সন্দেহজনক কারোর সঙ্গে কাজের বুয়া মোবাইলে কথা বলে কি না অথবা তার কাছে সন্দেহজনক কেউ দেখা করতে আসে কি না এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। ৭) বাড়িতে গ্যাসের চুলা, ইলেক্ট্রিক যন্ত্রাংশ ব্যবহারে কাজের বুয়া-কাজের লোক সতর্ক রয়েছে কি না, লক্ষ্য করুন। অসতর্কতার ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ৮) কাজের লোক-বুয়াকে নিয়ে কোথাও ভ্রমণে গেলে সব সময় সঙ্গে সঙ্গেই রাখুন। সে হারিয়ে গেলে বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আপনাকেই বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। ৯) আপনার বাসার কাজের লোক-বুয়ার সঙ্গে মানবিক আচরণ করুন।
ডিএমপি জানায়, সচেতনতাই রুখতে পারে কাজের লোকের অপরাধের তৎপরতা। কাজের লোককে অতি বিশ্বাস না করাই শ্রেয়। তাদের নজরদারিতে রাখতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। এ ছাড়া, যেকোনো প্রয়োজন ও সমস্যায় নিকটস্থ থানা বা ফাঁড়ি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হাফিজ আল আসাদ ঢাকা প্রকাশকে বলেন, ডিএমপি আগে থেকেই কাজের বুয়া ও কাজের লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সর্তক করে আসছে। এ বিষয়গুলো সাধারণ মানুষকে মেনে চলা উচিত। তাহলে গৃহকর্মীর হাতে গৃহকর্তাদের খুন বা অন্যান্য অপরাধ কমে আসবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার আহসান হাবীব পলাশ ঢাকা প্রকাশকে বলেন, ওই মামলার তদন্ত শেষ। নাহিদা ও বাচ্চুকে আসামি করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পিবিআই ৬টি সুপারিশ জানিয়েছে। এসব নিয়মনীতি মেনে চললে কিছু অপরাধ কমে আসবে।
এমকেএম/টিটি