কোস্ট গার্ডকে একটি নিজস্ব বাহিনী হিসেবে তৈরি করা হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আইন সংশোধনের মাধ্যমে কোস্ট গার্ড যাতে নিজেদের লোকবল নিয়োগ দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করছে সরকার।
আজ মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধ দমনে কোস্ট গার্ড বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, কোস্ট গার্ডকে শক্তিশালী ও আধুনিক করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ধারাবাহিকতায় আইন সংশোধন হচ্ছে যেখানে উল্লেখ থাকবে কোস্টগার্ড যাতে নিজস্ব লোকবল নিয়োগ দিতে পারে।
মাদক কারবারীরা বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে থাকে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের এক স্থানে বা এলাকায় বাধা দিলে নতুন করে উল্টো আরেক এলাকা বা পথ সৃষ্টি করে মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাচালানকারীরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভয়ংকর মাদক ইয়াবা-আইস। শুধু কোস্ট গার্ড না বিজিবি-পুলিশ সবাই সতর্ক। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে শুধু বিজিবি বা কোস্ট গার্ড নয়, আহ্বান করছি যেন সবাই আমাদের সহায়তা করেন।
এসময়, রাষ্ট্রীয়ভাবে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে মাদকের ব্যাপারে উৎসাহ বন্ধে মন্ত্রী ও বাহিনী পর্যায়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে পার্শ্ববর্তী দেশের মাদকের ব্যাপারে উৎসাহ বন্ধে মন্ত্রী ও বাহিনী পর্যায়ে আলোচনা করেছি। বর্ডারে সেন্সর বসিয়েছি, আরও বোট, নজরদারি বাড়াচ্ছি। মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি আমাদের।
সরকার সকল প্রকার চোরাচালান প্রতিরোধের চেষ্টা করছে, কিন্তু চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না, বিশেষ করে মাদক। এর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য কী ধরনের উদ্যোগ রয়েছে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মাদক তৈরি করে না। কিন্তু এর ভয়াল থাবা রয়েছে বাংলাদেশে। সেটা থেকে তরুণ যুব সমাজকে রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি। পার্শ্ববর্তী দেশ মাদক তৈরি করছে। তাদের সঙ্গে মন্ত্রী-বাহিনী পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবি টহল ড্রাইভ শেষে যখন ফিরে আসে তখন অহরহ ইয়াবা আসছে। এর কারণ পার্শ্ববর্তী দেশে মাদকের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে।
কোস্ট গার্ডে জনবল নিয়োগ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, কোস্ট গার্ডের জনবল সংকট ছিল। কোস্ট গার্ডে বরাবর বাংলাদেশ নেভি থেকে জনবল প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেজন্য একটু সংকট আছে। তবে ইতালি থেকে জাহাজ এনেছি, আরও আসবে। জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করা হচ্ছে। নিজস্ব বাহিনী যেমন বিজিবি, কোস্ট গার্ডও যেন তেমনিভাবে জনবল নিয়োগ দিতে পারে। এজন্য পটুয়াখালীতে ট্রেনিং অ্যাকাডেমি গড়া হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু কোস্টাল এরিয়া নয়, মানব পাচার, মাদকের লেনদেন নিয়ন্ত্রণে কোস্টাল এরিয়ায় সর্বদা সতর্ক রয়েছে কোস্ট গার্ড। আগে প্রায়শই পার্শ্ববর্তী দেশের মৎস্য শিকারিরা আসতেন, আমাদের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরতেন। সে চিত্র পাল্টে গেছে। সমুদ্রসীমার অতন্দ্র প্রহরী এখন কোস্ট গার্ড। কোস্ট গার্ডকে আরও শক্তিশালী স্বয়ংসম্পূর্ণ, আরও যুগোপযোগী, নির্ভরযোগ্য বাহিনীতে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কাজ চলছে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ১৯টি উপকূলীয় জেলা, ৪৭ হাজার কিলোমিটার কোস্টাল এরিয়ার রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা একটা দুরহ কাজ। কোস্টগার্ড তৈরির আগে এবং প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের আগে এগুলো ছিল অরক্ষিত। এখন মৎস্য-বনজ সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান মাদক ও বিশেষ করে ইলিশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কোস্ট গার্ড।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৯৪ সালে বেসরকারি বিল এনেছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। সেটি পাশ হয়। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান, বাহিনীতে পরিণত হয়েছে কোস্ট গার্ড। যখন যা প্রয়োজন ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন এবং স্লোগান ‘গার্ডিয়ান অ্যাট সি’ সফল হতে যাচ্ছে।
কেএমএইচ/টিটি