‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ আজ
আজ পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি বিশ্বে ভ্যালেন্টাইন’স ডে হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলাদেশেও বেশ কয়েক বছর ধরে ‘ভালোবাসা দিবস’ হিসেবে দিনটি পালন করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে অনেকেই দিনটিকে পালন করেন ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে।
১৯৮২ সালে তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খানের ঘোষিত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।
ছাত্রসমাজের দাবি ছিল একটি অবৈতনিক বৈষম্যহীন শিক্ষানীতি। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী ড. মজিদ খান যে নীতি ঘোষণা করেন, সেখানে বাণিজ্যিকীকরণ আর ধর্মীয় প্রতিফলন ঘটেছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। তাই শুরু থেকেই ওই নীতির বিরোধিতা করতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
সে বছর ১৭ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয় ছাত্র সংগঠনগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল ওই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে সচিবালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার পূর্বঘোষিত কর্মসূচী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ওই সমাবেশ ডাকে।
মিছিলের সামনেই ছিলেন মেয়েরা। মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা হাইকোর্ট এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। একসময় আকস্মিকভাবে রায়ট কার ঢুকিয়ে গরম পানি ছিটানো শুরু করে পুলিশ। এরপর লাঠিচার্জ ও নির্বিচারে গুলি। মিছিলে প্রথম গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল। এরপর একে একে জাফর, কাঞ্চন, দীপালী সাহাসহ নাম না জানা আরও অনেকে।
সেই মিছিলের সংগঠক কর্মীরা জানান, সকালে মিছিলে গুলি করা হয়েছিল টার্গেট করে, আর বিকালে কলাভবনে ঢুকে শিক্ষার্থীদের পেটানো হয়েছিল বেধড়ক। সহপাঠীদের মরদেহ যেমন পাননি তারা, কতজন শহীদ হয়েছিল সেদিন; সে হিসাবও নেই তাদের কাছে। জয়নাল ও মোজাম্মেল আইয়ুবের মরদেহ পাওয়া যায়। জাফর, কাঞ্চন, দিপালী সাহাসহ অনেকে নিখোঁজ হয়ে যায়, যাদের পর আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
বিকালে এবং পরের দিনও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলে। পুলিশ অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করে। রয়েছে নির্যাতনের অভিযোগও। কিছুদিন পরই সরকার একটি ঘোষণা দিয়ে শিক্ষানীতিটি স্থগিত করে।
এরপর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি দিনটিকে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।
আজ ভালোবাসা দিবস। ফাল্গুনের প্রথম দিন। এর মধ্য দিয়ে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ যেন চাপা না পড়ে যায়। শিক্ষা ও গণতন্ত্রের জন্য যারা এদিন শহীদ হয়েছিলেন, তাদের কথা যেন আমরা ভুলে না যাই। বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রতিরোধের এ কথা তুলে ধরার দায়িত্বও আমাদের রয়েছে। যেন তারা শিক্ষার অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে আরও সোচ্চার হতে পারে।
ছবি: প্রপদের সৌজন্যে
এসএ/