প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন । ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উপর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, "আমরা কোনো রাজনীতিতে ঢুকতে চাই না। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে দাঁড়াতে চাই না। আমরা নিরপেক্ষ থাকতে চাই। আপনারা আমাদের সাহায্য করবেন।"
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ‘সাংবাদিক হোসাইন জাকির বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সিইসি বলেন, "নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে এত বদনাম-এত গালি দেওয়ার কারণ কী? ১০০-২০০ কারণ বলা যেতে পারে, তবে আমার মতে সবচেয়ে বড় কারণ হলো নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক প্রভাব (Political control of the Election Commission)। অতীতে নির্বাচন কমিশনকে রাজনীতির কাছে সঁপে দেওয়া হয়েছে, এটিই মূল সমস্যা।"
তিনি আরও বলেন, "রাজনীতিবিদদের প্রভাব যদি বন্ধ করা না যায়, তাহলে আগের মতোই পরিস্থিতি বারবার ফিরে আসবে। হাজারো কারণ থাকতে পারে, তবে আমার দৃষ্টিতে নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপই অতীতের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল।"
সিইসি নাসির উদ্দিন তার বক্তব্যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, "আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই এবং এজন্য সাংবাদিকসহ সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।"
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা।
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা-দুই বছর আগেও ছিল দরিদ্র তালিকায় শীর্ষে। এ উপজেলার খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পড়তে যায়। তাদের মধ্যে বড় একটি অংশ থেকে যায় রাজিবপুরেই এবং ভর্তি হয় স্থানীয় কলেজগুলোতে। এদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের। এসব শিক্ষার্থীর স্থানীয় কলেজগুলোর মধ্যে প্রথম পছন্দ রাজিবপুর সরকারি কলেজ। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমজাদ হোসেন।
এক সময় দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত ছিল কলেজটি। সরকারি হওয়ার পরও দুর্নীতিবাজদের থাবা থেকে রেহাই পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষার ফি প্রথমে নির্ধারণ করা হয়েছিল - ছেলেদের জন্য ১৭৬০ টাকা এবং মেয়েদের জন্য ১৪০০ টাকা। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে ৭ এপ্রিল তা কমিয়ে আনা হয় ছেলেদের জন্য ১৩০০ টাকা এবং মেয়েদের জন্য ১০০০ টাকায়। অথচ সরকারি নির্ধারিত ফি মাত্র ৩০০ টাকা।
ইসরাত জাহান আঁখি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “পরীক্ষার ফি বেশি হওয়ায় আমরা আন্দোলন করি, পরে স্যাররা ফি কমিয়ে দেন। তবে শুরুতে কয়েকজন আগের নির্ধারিত ফি-ই দিয়েছে।”
সুজন মিয়া ও হারুন-অর-রশিদ নামের দুই শিক্ষার্থী বলেন, “সরকারি কলেজে এত ফি ধরায় আমরা হতাশ। যদি সরকারি কলেজেই এমন ফি হয়, তাহলে প্রাইভেট কলেজে পড়াই ভালো। আমরা চাই সরকারি কলেজ সরকারি নিয়মে চলুক এবং নির্ধারিত ফি-ই আদায় করা হোক।”
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পর বার্ষিক ও দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়া যাবে। এর বাইরে কোনো পরীক্ষার কথা বলা হয়নি। কিন্তু নিয়মবহির্ভূতভাবে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে 'মূল্যায়ন পরীক্ষা'র নামে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে আদায় করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, “ভর্তি হওয়ার পরপরই আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। অনেকেই তখন বই-ই কিনে উঠতে পারেনি। এখন বুঝতে পারছি, শুধু টাকা আদায়ের জন্যই এ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।”
ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হারুন-অর-রশিদ বলেন, “আমি ভর্তি হওয়ার পর থেকে যতগুলো পরীক্ষা দিয়েছি, প্রায় সবকটিতে ১ হাজার টাকার বেশি ফি দিতে হয়েছে। সরকারি কলেজে এত টাকা দিয়ে পড়াশোনা করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। আমরা চাই, সরকারি নির্ধারিত ফি অনুযায়ী কলেজ পরিচালিত হোক।”
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
অভিযোগ রয়েছে, রাজিবপুর সরকারি কলেজ ফান্ডের প্রায় ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে কোনো কাজ না করেই আত্মসাৎ করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন এবং কয়েকজন অসাধু শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “দীর্ঘদিন হলো ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজই শুরু হয়নি। অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছামতো কলেজ পরিচালনা করছেন।”
সরকারি পরীক্ষার ফি যেখানে ৩০০ টাকা, সেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকা। এ বিষয়ে বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি যে হিসাব উপস্থাপন করেছেন, সেখানে বলা হয়েছে-পরীক্ষার ফি ২৫০ টাকা, পুনঃভর্তি ৩০ টাকা, বেতন (৩০×১২) ৩৬০ টাকা, অত্যাবশ্যকীয় খরচ ৪৬০ টাকা এবং সেশন ফি ২০০ টাকা, মোট ১৩০০ টাকা। তবে শিক্ষার্থীদের দেওয়া রশিদে কোনো খাতের উল্লেখ নেই।
সাক্ষাৎকারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন বলেন, “৪ লাখ টাকার বিষয়টি প্রশাসনিক ব্যয়। পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে কেনাকাটার জন্য ব্যয় করা হয়েছে। তবে ব্যয়ের কোনো কাগজ তিনি দেখাতে পারেননি। কাগজপত্র সম্পর্কে বলেন, ‘কাজের চাপ বেশি, পরীক্ষা চলছে-এই মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব না।’”
অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, “পরীক্ষার ফি ২৫০ টাকা। এখানে ১২ মাসের বেতন, অত্যাবশ্যকীয় ফি যোগ হয়েছে। কম্পিউটার অপারেটর মনোয়ার, বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষক-তাদেরও সম্মানী দিতে হয়।”
নিয়মবহির্ভূত পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, “সব শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।”
২০০৯ সালের বহুল আলোচিত ও নৃশংস বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতেই হবে, এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (১৬ এপ্রিল) এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নৃশংসভাবে নিজেদের অফিসারদেরই তারা মেরেছিল। মসৃণভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। আমরা সবাই উত্তর খুঁজছি। কমিশনকে এ ঘটনা তদন্তে সফল হতেই হবে। পুরো জাতি তদন্ত কমিশনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এ সময় তদন্ত কমিশনকে সকল ধরণের সহযোগিতা করার কথাও বলেন তিনি।
কমিশন প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আলম ফজলুর রহমান বলেন, কমিশন বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। যেহেতু ১৬ বছর আগের ঘটনা তাই অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তাছাড়া, অভিযুক্ত অনেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কারাগারে থাকা কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। তদন্তের জন্য যোগাযোগ করা প্রয়োজন এমন ২৩ জন বিদেশে অবস্থান করছেন। তার মধ্যে ৮ জন সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য যোগাযোগ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, কমিশন হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের প্যাটার্ন নিয়ে তদন্ত করছে। তৎকালীন বিডিআরের মহাপরিচালককে হত্যার পর বাকিদের হত্যা করা হয়েছিল। এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পরিকল্পনা ছাড়া এমন হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। এর শেকড় খুঁজে বের করতে হবে।
কমিশনের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বলেন, এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকেও সরানো হয়নি। কাউকে দায়ী করা হয়নি। এটি গোয়েন্দা সংস্থা, সামরিক বাহিনী এবং রাজনৈতিক ব্যর্থতা।
বৈঠকে তদন্ত কমিশনের সদস্য বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান, মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, ড. এম আকবর আলী, মো. শরীফুল ইসলাম, শাহনেওয়াজ খান চন্দন, এ টি কে এম ইকবাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে নবম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির হোসেনকে অপহরণ ও হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনতা। বিচারের দাবিতে বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে দুই ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভকারীরা চারমাথা এলাকায় মহাসড়ক ও দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করলে উভয় সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়ে, সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা ও দরবস্ত ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফিজুর রহমান দুলুসহ আরও অনেকে। তারা অবিলম্বে হত্যার বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা এবং গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির আশ্বাস দিলে, প্রায় দুই ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ ইতোমধ্যে মূল আসামি ইউনুছ আলীসহ চারজনকে আটক করেছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
নিহত সাব্বির হোসেন উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের রামনাথপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে এবং বিশুবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে, সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের পরিত্যক্ত একটি কূপ থেকে সাব্বিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।