যেকোনো উপায়ে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সংবাদ সম্মেলনে ব্রিফ করছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সীমান্ত হত্যা যেকোনো উপায়ে বন্ধ করতে হবে। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ থেকে ২০ তারিখ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ব্সছে ওই সম্মেলন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর এবারই প্রথম সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক হতে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের যে সীমান্ত সম্মেলন হতে যাচ্ছে, সেখানে সীমান্ত হত্যা ও মাদকের কারবারসহ যাবতীয় সমস্যা নিয়ে অতীতের তুলনায় ‘ভিন্ন সুরে’ কথা হবে।
তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ১৫০ গজের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ, নদী সমস্যাসহ বৈঠকে যেসব বেশি আলোচনা হয়েছে, সেসব বিষয় আমরা কোনো ছাড় দেব না। এবার কথা বলার টোন আলাদা হবে।
জাহাঙ্গীরর আলম বলেন, মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে সে বিষয়ে তারা আলোচনা সেরে নিয়েছেন।
বৈঠকে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর প্রধান ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ভূমি রেকর্ড অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, যৌথ নদী কমিশনের প্রতিনিধি থাকবেন বলে জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, এবারের বৈঠকে বিএসএফ এবং ভারতীয় দুষ্কৃতকারী কর্তৃক বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিকদের ওপর গুলি চলিয়ে আহত বা সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা, বাংলাদেশ কৃষকদের সীমান্ত এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বন্ধ করা, ভারতীয় নাগরিক সীমান্ত লঙ্ঘন করে দেশে প্রবেশ বন্ধ করা, সীমান্ত এলাকায় ফেনসিডিলসহ মাদক কারখানা বন্ধ করা, সীমান্ত এলাকায় ১৫০ গজের ভেতরে অনুমতি ছাড়া কাজ বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা হবে।
এছাড়া আগরতলা দিয়ে শিল্প বর্জ্য বাংলাদেশে আসা বন্ধ করা, নদীর পানি সুষম বণ্টনের লক্ষ্যে পানি চুক্তি বাস্তবায়ন করা এবং ফেনীর মুহুরীর চরে বর্ডার পিলার স্থাপন করে সীমানা নির্ধারণ করার বিষয়টি আলোচনার টেবিলে থাকবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সরকারে পালাবদলের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ‘বহু ভুয়া খবর’ প্রচারের বিষয়টি গত কয়েকমাস ধরে আলোচনায় আছে। এ বিষয়টিও থাকছে আলোচনায়।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে যে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয়, সেই অপপ্রচার বন্ধ করা যায় কীভাবে সেটা নিয়েও আলোচনা হবে। এবং কোঅর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানও এবারের বৈঠকে আলোচনার এজেন্ডায় রাখা হয়েছে।
অতীতের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকের উদাহরণ তুলে ধরে এক সাংবাদিক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলেন, আগেও প্রায় একই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, ফেব্রুয়ারি মাসের বৈঠকে নতুনত্ব কি আছে?
জবাবে উপদেষ্টা বলেন, কী চাচ্ছেন নতুন? নতুন বিষয় আছে তো। নতুনত্ব হল ওটা আগে যেভাবে কথাটা বলত, এবার কথা বলার টোন আলাদা হবে।
এসব বিষয় ছাড়াও বাংলাদেশ-ভারতের পারস্পরিক আস্থা বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সীমান্ত নিয়ে ভারতের সাথে চারটি চুক্তি হয়েছে বিগত সরকারের আমলে। এর মধ্যে ২০১০ সালের যে চুক্তিটি হয়েছে সেখানেই বড় ধরনের একটু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ওই সময় কিছু অসম চুক্তি আমরা স্বাক্ষর করে ফেলেছি। যেখানে বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিয়েছে আঙ্গরপোতা ও দহগ্রাম এলাকায় জিরো লাইনের মধ্যে ফেইস করতে পারা।
ওই চুক্তির ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ওই চুক্তির পরিবর্তে তারা (ভারত) বলেছে যে, তিনবিঘা করিডোর আমরা ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারব। কিন্তু এই তিনবিঘা করিডোরের ব্যাপারে বেরুবাড়ি আমরা বহু আগেই দিয়ে দিয়েছি।
ফলে চুক্তির এই অংশটুকু অসম হয়ে গেছে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই চুক্তিগুলো বাতিল যেন করা হয় সেগুলো আমরা তাদের বলব। একবারে আমরা বাতিল করে দিলাম বললেতো হবে না। এজন্যই আমরা আলোচনা করব।