র্যাবের বিলুপ্তি চায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
ছবি: সংগৃহীত
নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) প্রকাশিত তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র্যাবকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
‘আফটার দ্য মুনসুন রেভল্যুশন: আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ৫০ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে র্যাব বিলুপ্তির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
২০০৪ সালে বিএনপি সরকারের সময় গঠিত র্যাবের বিরুদ্ধে গুম, হত্যা ও ক্রসফায়ারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। র্যাবের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্যাতন ও হত্যার জন্য বাহিনীর আলাদা দল সক্রিয় থাকে। এ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অনেকেই এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য গর্ববোধ করেন।
২০২১ সালে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাব ও এর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তীতে, গুম–সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিশনও র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করে।
এইচআরডব্লিউর মতে, র্যাব বিলুপ্তির পর যাতে সদস্যরা অন্য ইউনিটে গিয়ে একই ধরনের অপকর্ম না করতে পারে, সে জন্য তাদের মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। একইসঙ্গে আইনি কাঠামোতে সংস্কার আনতে হবে।
প্রতিবেদনে জাতিসংঘের সহায়তায় নিরাপত্তা খাত সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দাতা দেশগুলোকেও বিনিয়োগের মাধ্যমে এসব সংস্কারকে সহায়তা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হয়। এ বিষয়ে এইচআরডব্লিউর এশিয়া বিভাগের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রতিবেদনে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নাগরিক সমাজের ওপর নজরদারি ও দমনমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এইচআরডব্লিউর মতে, সংস্কারগুলো দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখতে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সাহায্য প্রয়োজন। ভবিষ্যৎ সরকার যাতে এসব সংস্কার বাতিল না করতে পারে, সে জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি। সূত্র: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, জাতিসংঘ।