চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা হচ্ছে
প্রথমবারের মতো সরকার বন্দর ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামকে সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সফররত কোরিয়ার একটি বিশেষজ্ঞ সার্ভে দল আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রামের উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশিজনের সঙ্গে মতবিনিময় করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। এর ভিত্তিতে চট্টগ্রামের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে মাস ট্রানজিট লাইন বা মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য এখন পর্যন্ত কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়নি। যার ফলে বাণিজ্যিক নগরীতে অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীনভাবে বিভিন্ন রকমের পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রায় সব সড়কেই যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সংস্থা বিভিন্নভাবে পরিবহন অবকাঠামো গড়ে তুলেছেন। এতে করে নগরীতে প্রায় সব সময়ই যানজট লেগে থাকে। পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থাকে আধুনিক ও সমন্বিত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে।
প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ চট্টগ্রামের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। যার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম নগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য একটি সমন্বিত আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই পরিকল্পনায় চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ এবং এর বাণিজ্যিক গুরুত্বের দিকটি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ক্রমবর্ধমান চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়ন চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে সার্কুলার রোড, রেডিয়াল রোড, মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, বাস টার্মিনালের জন্য স্থান নির্ধারণ, বাস রুট রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিচালনার সমীক্ষা করা হবে। এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর চট্টগ্রামে পরিকল্পিত সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা ও মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এজন্য প্রায় ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সমীক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান কোইকার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় এই প্রকল্পটি বাস্তবিায়িত হবে। এতে কোরিয়া সরকার আর্থিক অনুদান দিচ্ছে ৫১ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবের রহমান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আগে ছিল না। এখন নতুন করে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এটি দ্রুত বাস্তবায়নে কাজ চলছে।’
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামের সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থার জন্য যে সমীক্ষা প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) তত্ত্বাবধানে সব সংস্থাকে নিয়ে সমন্বয় করেই বাস্তবায়ন করা হবে।
এসএ/