রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ, ঢাকার কড়া প্রতিবাদ
গোয়েন লুইস। ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা নিয়ে গত সপ্তাহে প্রকাশিত জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে ২০২১ সালের পর আর কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। ওই প্রতিবেদনটি কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? তারও ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসকে তলব করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সরকার।
সোমবার (১৪ জানুয়ারী) দুপুরে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসকে ডেকে পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ সময় ঢাকার ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিসহ তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক ফেরদৌসী শাহরিয়ারের দপ্তরে গোয়েন লুইসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলকে ঢাকার পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। এ সময় জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসানও এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে বাস্তুচ্যুতি প্রতিবেদন প্রকাশ করে মিয়ানমার ইউএনএইচসিআর। এতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ পর্যন্ত দেশটির অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি হয়েছে ৩২ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে ৭১ হাজার ৩০০ নাগরিক ভারতের মণিপুর ও মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে। সাময়িকভাবে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের নাগরিকরা। আর বাংলাদেশ অংশে শরণার্থীরা পরিকল্পিত আশ্রয়স্থলে রয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গত এক বছরে আরাকান আর্মি ও জান্তা সরকারের বাহিনী রাখাইনে যে যুদ্ধ চালিয়েছে, তাতে এ অঞ্চলের বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ সময়সহ রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সম্প্রতি বিশালসংখ্যক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এসব তথ্য নেই।
তিনি বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জাতিসংঘ প্রধানকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে ভুল সংশোধন করতে বলা হয়েছে। বৈঠকে জাতিসংঘ সম্প্রতি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রবেশের বিষয়টি স্বীকার করেছে। একই সঙ্গে তথ্যগুলো প্রতিবেদনে স্থান না পাওয়ার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি মিয়ানমারে থাকা জাতিসংঘের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত জবাব দেবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশকে। তথ্য সংক্রান্ত ভুল-বিভ্রান্তি দ্রুত দূর করা হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগত কয়েক মাসে মিয়ানমার থেকে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এসব রোহিঙ্গার তালিকা বাংলাদেশের ইউএনএইচসিআর করেছে। শুধু তাই নয়, এদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় আনতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে। অথচ সেই সংস্থার প্রতিবেদনে ২০২১ সালের পর মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের কোনো তথ্য নেই।