মাহফিলে ভারতীয় অভিনেত্রীর সৌন্দর্য বর্ণনা, ক্ষমা চাইলেন আমির হামজা
মাহফিলে ভারতীয় অভিনেত্রীর সৌন্দর্য বর্ণনা, ক্ষমা চাইলেন আমির হামজা। ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি এক ওয়াজ মাহফিলে ভারতীয় অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলেছেন বক্তা আমির হামজা।সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সৌন্দর্যের উদাহরণ দিতে গিয়ে এ অভিনেত্রীকে বিশ্বের অন্যতম সুন্দরী হিসেবে আখ্যা দেন তিনি। যদিও তিনি রেফারেন্স দিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের। তবুও এ নিয়ে যেন আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই।
এরই প্রেক্ষিতে নিজের বক্তব্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন আমির হামজা। একটি ওয়াজ মাহফিলের ভিডিওতে দেখা যায়, আমির হামজা বলছেন, এখন বিশ্বে যত সুন্দর মানুষ আছে; আপনারা ইন্টারনেট ঘাঁটবেন। ১৫৭টা রাষ্ট্রের মধ্যে চেহারার কাটিংয়ে ১ নম্বরে রয়েছেন রাশমিকা মান্দানা। নাম শুনেছেন? চেহারার কাটিংয়ে এখন ১ নম্বরে আছেন। এই মহিলার দিকে একটু আল্লাহর নাম নিয়ে তাকাবেন। দেখেন তো কী সুন্দর করে আল্লাহ তাকে বানিয়েছেন। এর চেয়ে শতগুণে সুন্দর ছিল আমাদের আদি মাতা হাওয়া (আ.)।
এদিকে এ ঘটনায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় দেশবাসী ও শ্রোতাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আমির হামজা। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান আমির হামজা।
পোস্টে আমির হামজা লেখেন, ‘আসসালামু আলাইকুম প্রিয় তৌহিদী জনতা। আপনাদেরকে বারবার আশাহত করার জন্য আমি দুঃখপ্রকাশ করছি, ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনাদেরকে কিছু কথা বলা জরুরি মনে করছি। যাতে আপনারা আমার বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে ইনসাফ করতে পারেন।’
তিনি লেখেন, ‘ঢালাওভাবে যেসব কথাবার্তা চারদিকে বলা হচ্ছে তার সবটুকুই কি সঠিক? নাকি ভিন্ন বাস্তবতা আছে? সম্প্রতি সিরিয়ার কারাগার থেকে মুক্ত বন্দিদের চিত্র আপনাদের সামনে। তারা অনেকেই নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে গেছে।’
‘ফ্যাসিস্টের কারাগারে থাকাকালীন এমন কোনো নির্যাতন নেই যা আমার উপরে করা হয়নি। আমার ব্রেনে পর্যন্ত কারেন্ট শক দেয়া হয়েছে ও স্লো পয়জনিং করা হয়েছে। বাকি নির্যাতনের কথা আর না বলি। আমি স্বীকার করছি, মানসিকভাবে আমি পুরোপুরি সুস্থ না। শারীরিক ও মানসিক কোনো দিক দিয়েই আমি ফিট না। নিজের অজান্তেই অসংলগ্ন কথাবার্তা মুখে চলে আসছে। আমার আচরণও আমার নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এসব চিন্তা আমাকে আরও অসুস্থ করে তুলেছে’, পোস্টে লেখেন আমির হামজা।
তিনি আরও লেখেন, ‘আর আমার দেয়া বক্তব্য নিয়ে চলমান যে বিতর্ক। সেই আলোচনাটাতে শুধু উক্ত নায়িকার আলাপটুকুই আমার ভুল হয়েছে আমি স্বীকার করছি। তবে যদি আলোচনাটি পুরোপুরি শোনেন তাহলে দেখবেন আলোচনাটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভবিষ্যতে আমি আরও সতর্ক থাকার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।’
হামজা লেখেন, ‘এখন আপনারা বলতে পারেন আমি যেহেতু মানসিক ও শারীরিকভাবে ফিট না তাহলে এতো মাহফিল কেন করছি? সেক্ষেত্রে আপনাকে বলবো আপনি কিছুক্ষণ আমার জায়গায় দাঁড়ান ভাই প্লিজ! তারপর ভাবুন। খোলামেলা আপনাদেরকে বলছি, জামায়াতের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা, শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ যখন একটা মাহফিলের জন্য রিকুয়েস্ট করে তখন আমার কী করার থাকতে পারে বলুন?’
‘শুধু ভিআইপিদের রিকুয়েস্ট রাখতে গেলেই সাধারণ জনতা তো বহুদূর, জেলা দায়িত্বশীল ও আত্মীয়স্বজনদের রিকুয়েস্ট রাখাও সম্ভব হয়না। অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট পরবর্তী সময়ের অবাধ স্বাধীনতা তাফসির মাহফিল আয়োজনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। তার একটি প্রেসার অন্যদিকে শায়েখ মিজানুর রহমান আজহারী ভাই দেশে না থাকায় আরও একটি চাপ সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে যথাযথ শারীরিক, মানসিক ও অ্যাকাডেমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার সুযোগ পাইনি। যার ফলেই মাঝেমধ্যে এমন ভুল-ত্রুটি আমার দ্বারা হয়ে যাচ্ছে’, স্বীকার করেন আমির হামজা।
তিনি আরও লেখেন, ‘আমি আবারও বলছি আমি সুস্থ না। অন্যদিকে বাস্তবতার শিকার। যেখানে সুস্থ মানুষের পক্ষেই এতো প্রোগ্রাম, জার্নি করা অসম্ভব হয়ে যায় সেখানে আমার মত অসুস্থ ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা কি একটু ভেবে দেখবেন।’
সবশেষে আমির হামজা লেখেন, ‘আমি আপনাদের কাছে আবারও ক্ষমা চাই এবং এ সিজনে আমার ভুল-ভ্রান্তিগুলো দিয়ে প্রকৃত আমাকে জাজ কইরেন না দয়া করে। আমি কথা দিচ্ছি, পরবর্তী বছরগুলোতে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ও আমার যথাযথ ট্রিটমেন্ট নিয়ে তাফসির মাহফিলে অংশগ্রহণ করবো ইনশাআল্লাহ। সঙ্গে গণহারে দাওয়াত নেয়া বন্ধ করে দেবো।’