বাবুল আক্তারের মুক্তি নিয়ে বিতর্ক: জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ
ছবি: সংগৃহীত
উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েও এখনও কারাগার থেকে মুক্তি পাননি স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনে বাদী থেকে আসামি বনে যাওয়া আলোচিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। হাইকোর্ট বাবুল আক্তারকে জামিন দিলেও কারা কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দিচ্ছে না।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাবুল আক্তারকে মুক্তি না দিয়ে জেল কর্তৃপক্ষ আদালত অবমাননা ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। বাবুল আক্তার গত ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ বাদীর আইনজীবীর দেওয়া এক সনদের ভিত্তিতে বাবুল আক্তারকে মুক্তি দিচ্ছে না।
কফিল উদ্দিন বলেন, যেই বিষয়টি তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ আদালত পিটিশন আকারে শুনানি করে না মঞ্জুর করে আইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয় বিবেচনা করে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন সেখানে জেল কর্তৃপক্ষ আবার সেই সনদের আলোকে তাকে মুক্তি না দিয়ে এটার পুনর্বিবেচনা করার এখতিয়ার রাখে না।
তিনি আরও বলেন, আমার দৃষ্টিতে এটা ছাড়া অন্য কোন ডকুমেন্টস যদি না থাকে তাহলে জেল কর্তৃপক্ষ গুরুতর আদালত অবমাননা করেছেন। এটা পেনাল কোডের ৩৪২ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা কারা কর্তৃপক্ষকে আইনগত নোটিশ পাঠালেও তারা তা গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা লীভ টু আপীলের শুনানির আদেশ না আসা পর্যন্ত তাকে ছাড়তে পারছি না। ছাড়ার কোনও সুযোগ নেই।
আগামীকাল মঙ্গলবার বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা আদালত অবমাননার মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
তবে পরবর্তীতে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।
এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজি আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
গত বছরের ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।