সংকটে দেশের ৪৬০ থানা, পুলিশের কার্যক্রমে স্থবিরতা

ছবি: সংগৃহীত
গত ৫ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী সহিংসতা ও হামলায় বিপর্যস্ত পুলিশ বাহিনী এখনো স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারছে না। সহিংসতায় থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামোয় ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব পড়েছে জনসেবায়। পুলিশের কাজের অচলাবস্থার মাশুল দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অপরদিকে, বেড়েছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ। সড়ক ও মহাসড়ক থেকে শহর-জনপদ পর্যন্ত এখনো রয়েছে নিরাপত্তার ঘাটতি।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত জুলাই-আগস্টের সহিংসতায় ১২০টি থানায় ব্যাপক ক্ষতি হয়, যার মধ্যে ৫৮টি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ৬২টি থানায় চালানো হয় ভাঙচুর। ১১৪টি পুলিশ ফাঁড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লুটপাটের শিকার হয়েছে অস্ত্র, গোলাবারুদ, মামলার নথি এবং থানার অন্যান্য সরঞ্জাম।
ডিএমপির আওতায় থাকা ৫০টি থানার মধ্যে ২১টি থানায় সহিংসতা চালানো হয়, যার মধ্যে ১৩টি থানা আগুনে পুড়ে যায়। এসব থানার অনেক নথি, আলামত ও সরঞ্জাম পুড়ে গেছে বা লুট হয়েছে। চার মাস পার হলেও বেশির ভাগ থানার কার্যক্রম এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
হামলায় ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত এবং ৫০৭ জন আহত হন। লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মব কন্ট্রোলেও যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না পুলিশ। উদাহরণস্বরূপ, হবিগঞ্জের আজমীরিগঞ্জে দুই পক্ষের দেড় ঘণ্টার সংঘর্ষের সময় পুলিশ ভয়ে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে পারেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় যৌথ বাহিনীর সহায়তায়।
নবনিযুক্ত আইজিপি বাহারুল আলম জানিয়েছেন, তিনি পুলিশের কার্যক্রমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা মনে করেন, পুলিশের মিলিটারাইজেশনের ফলে কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এ বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে মেরামতকাজ চললেও ক্ষতির পূর্ণ হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যেমন, মিরপুর মডেল থানায় ৬৬০টি মামলার নথি এবং ২৩০টি মামলার আলামত পুড়ে গেছে। আদাবর থানার চারটি গাড়ি, ২০টি মোটরসাইকেল এবং ৩০টি ল্যাপটপ লুট বা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব থানায় সেবা কার্যক্রম কোনোভাবে চালানো হলেও পূর্ণ কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুলিশের তৃণমূল পর্যায়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের সহায়তা নিয়ে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনা উচিত। প্রয়োজনে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও যৌথ বাহিনীর সহায়তা নিতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার, জনসম্পৃক্ততা, এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
