‘ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের আবর্তে আটকে বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রতিবেশীদের অনাগ্রহ’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রশ্নে প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে আশানুরূপ সমর্থন পায়নি বাংলাদেশ। এই বাস্তবতায় ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ জটিলতাকে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর আয়োজিত সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "প্রশ্ন আসে, চীন কেন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে এগিয়ে আসছে না? কারণ চীনের জন্য বঙ্গোপসাগর এবং মিয়ানমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারকে পাশে রেখে চীন তার কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করছে। একইভাবে ভারতও কালাদান প্রকল্পের কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। এই ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে বাংলাদেশের স্বার্থ গুরুত্ব পাচ্ছে না।"
তিনি আরও বলেন, "আমি কাউকে দোষারোপ করছি না, কারণ প্রতিটি দেশ তার নিজস্ব স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এসব স্বার্থের সঙ্গে আমাদের স্বার্থের কোনো মিল নেই। যার ফলে সমস্যাটি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই সংকট দ্রুত সমাধানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।"
রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি বিশ্বব্যাপী একটি গুরুতর সংকটে পরিণত হতে পারে বলে সতর্ক করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, "যে তরুণ প্রজন্মটি শরণার্থী শিবিরে কোনো ভবিষ্যৎ আশা ছাড়াই বড় হচ্ছে, তাদের জীবনে লক্ষ্যহীনতা ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে। অলস বসে থাকা এই তরুণরা সময়ের পরিক্রমায় শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের জন্যও বড় ধরনের সমস্যা হয়ে উঠতে পারে।"
এ সংকট সমাধানের জন্য বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে কার্যকর সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "এই সমস্যার সমাধান ছাড়া এটি কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তাই সকলের উচিত সম্মিলিতভাবে সমাধানের পথ বের করা।"
বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও প্রতিবেশীদের ভূ-রাজনৈতিক প্রাধান্য এবং অভ্যন্তরীণ স্বার্থের কারণে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তবে এই সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে তা সমগ্র অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার জন্ম দেবে বলেও তিনি সতর্ক করেন।