দেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নেও সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাংক : গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কীভাবে এগোচ্ছে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নে মার্কিন সরকার নীতি সহায়তা দিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকও এ খাতে উন্নয়নে অর্থনৈতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে চলমান বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও বিশ্বব্যাংকের অংশীদারদের সঙ্গে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি খাতের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, যা গ্রহণ করেছে বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি আরও বলেন, যেসব ব্যক্তি নামে-বেনামে ব্যাংক ঋণ নিয়ে অর্থ পাচার করেছেন এবং বিদেশে সম্পদ গড়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সম্পদের অবস্থান নির্ণয় করে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেবে। ইতোমধ্যে বিদেশি তালিকাভুক্ত দশটি প্রতিষ্ঠানকে সম্পদ মূল্যায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান শীঘ্রই নিয়োগ পাবে।
গভর্নর ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, এমন সংকটেও গ্রাহকরা শান্ত থেকেছেন এবং কোনো প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ চালাননি। এটি একটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়, যা প্রমাণ করে দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রতি জনগণের আস্থা।
সুদের হার সম্পর্কে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশেও সুদ হার কমানো সম্ভব হবে। গত ২২ অক্টোবর দেশে নীতি সুদ হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯.৫০ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। এছাড়া ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্য স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) সুদ হার ১১ শতাংশ থেকে ১১.৫০ শতাংশে এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির (এসডিএফ) হার ৮ শতাংশ থেকে ৮.৫০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী মাস থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদের মূল্যায়ন শুরু করবে এবং রিপোর্ট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত রোডম্যাপ তৈরি করার জন্যও নীতি সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফের বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে। নভেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের মাধ্যমে সম্পদ মূল্যায়নের কাজ শুরু হবে। একটি রোডম্যাপের আওতায় যাচাই-বাছাই করে নির্ধারণ করা হবে কোন কোন ব্যাংক কী পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।