নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে পোশাক কারখানা খুলবেন না মালিকরা
ছবি: সংগৃহীত
নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে পোশাক কারখানা খুলবেন না বলে জানিয়েছেন রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরা। তারা নিজেদের ও কর্মীদের জন্য নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন
দাবি পূরণ করার পরও শ্রমিকরা কারখানায় ঢুকে মারধর ও ভাঙচুর চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে এসব জানান তারা। স্থানীয় উসকানিদাতা দুর্বৃত্তদের হাত থেকে কারখানাগুলো বাঁচাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে কারখানা খোলা হবে না।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিজিএমইএ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাভার ও আশুলিয়া অঞ্চলের কারখানা মালিকরা এ দাবি জানান। বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল্লাহিল রাকিব সরকারের কাছে বার্তা পাঠানোর আশ্বাস দেন।
সভায় ফ্যাশন ডটকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মনিরুল আলম (শুভ) বলেন, ‘অতীতে নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের দাবিটা শ্রমিকদের জন্য। এখন নিরাপদ কর্মস্থল শুধু শ্রমিক নয়, এটা মালিক ও কর্মীদের জন্য। শ্রমিকরা মারমুখী। কর্মকর্তারা কাজ করতে চান না নিরাপত্তার কারণে।’
‘সমষ্টিগত অস্থিরতা ও কর্মচারীদের ওপর হামলার পেছনে অপরাধীদের চিহ্নিত করুন। কেন তারা এমন করছে তা প্রকাশ করা উচিত। হামলার মতো ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ বন্ধ করতে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য ব্যবস্থা নিতে হবে।’ এ দাবি জানান মনিরুল।
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা অন্য কারখানায় হামলা চালাচ্ছে, যেখানে কোনো অশান্তি নেই। কোনো কারণ ছাড়াই তারা শ্রমিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, ভাঙচুর করছে। তারা অন্য কারখানার শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধা দিতে পারে না।’
লুসাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান দাবি করেন, ‘হঠাৎ করে মানবসম্পদ প্রশাসক প্রধানের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। মানবসম্পদ বিভাগের প্রধানকে মারধরকারী কয়েকজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তাদের দাবির মুখে তা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের বিক্ষোভ থামায়নি, বরং কাজ থেকে বিরত থাকছে।’
‘তারা কর্মকর্তাদের একটি তালিকা রাখে এবং তাদের বরখাস্ত করতে বলে। তবে আমি তাদের নিশ্চিত করেছিলাম যে তারা যদি অসদাচরণের সঙ্গে জড়িত থাকে আমি ব্যবস্থা নেবো। তবে তারা তাদের দাবিতে অটল। ওই কর্মকর্তাদের বরখাস্ত না করা পর্যন্ত তারা কাজে যোগ দেবে না।’ বলেন তিনি।
বিজিএমইএ পরিচালক ও এনভয় ডিজাইন লিমিটেডের পরিচালক ব্যারিস্টার শেহরিন সালাম ঐশী বলেন, ‘শ্রমিক অসন্তোষের শুরু থেকেই কোনো দাবি না থাকলেও হঠাৎ করে ১৮ দফা দাবি পেশ করা হয়। কারখানার উৎপাদন অন্তত ২০ দিনের জন্য বন্ধ ছিল।’
ঐশী বলেন, ‘৯ অক্টোবর শ্রমিকরা জেনারেল ম্যানেজার ও অন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে আক্রমণ করে, যাদের মধ্যে একজন মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত পান এবং অন্যজনকে ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে।’
‘যখন কেউ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে এবং শাস্তিহীন হয়ে যায়, তার মানে আমরা তা করতে দিচ্ছি। আমরা কারখানা চালাতে চাই। সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। এটা নিশ্চিত না হলে আমরা আর কারখানা চালাতে পারবো না।’ বলেন ঐশী।
একদল লোক এআর জিন্স কারখানায় আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তারা কারখানা চত্বরে ভাঙচুর চালায়। এআর জিন্সের মালিক রাকিবুল কবির বলেন, ‘একটি অজ্ঞাতপরিচয় দল আমার কারখানার সামনে এসে কারখানায় আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। আতঙ্কিত হয়ে আমি বিজিএমইএ নেতাদের ফোন করি এবং তারা সেনাবাহিনীকে খবর দেন। তারা আড়াই ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার কারখানাটি একটি কমপ্ল্যান্ট এবং প্রত্যয়িত সবুজ লিড প্লাটিনাম কারখানা। বেতন পরিশোধে কোনো বকেয়া বা বিলম্ব নেই। এমনকি আমি আইন অনুযায়ী সময়সীমার আগে অর্থ দেই। সরকার নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে আমি কারখানা চালাবো না।’
বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল্লাহিল রাকিব বলেন, ‘কিছু বহিরাগত কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। নিরাপত্তার দাবি কারখানা মালিকদের অধিকার। এটি যে কোনো মূল্যে নিশ্চিত করা উচিত যদি কারখানার মালিকরা তাদের কর্মচারীর নিরাপত্তা নিয়ে ভয় পান। কারখানাটি বন্ধ করে দিলে অর্থনীতি ও শ্রমিকদের জন্য ভালো হবে না।’
তিনি অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় যথাযথ ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কামনা করেন।