গোপনে দেশ ছেড়েছেন আসাদুজ্জামান খান, নানক ও নাছিম
ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। আর তারপর থেকে আত্মগোপনে গেছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য (এমপি), দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এরই মধ্যে গোপনে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশ ছেড়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
দেশত্যাগের জন্য কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ছাড়া অধিকাংশ ব্যক্তি ভারত সীমান্ত বেছে নিয়েছেন। তারা যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিলেট, দিনাজপুরের হিলি ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্ত ব্যবহার করেছেন। যাঁরা পালিয়ে গেছেন বা পালানোর চেষ্টায় আছেন, তাঁদের প্রায় সবাই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আরও বেশ কয়েকজন নেতার দেশ ছাড়ার গুঞ্জন রয়েছে। তবে তাঁদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শেখ হাসিনার আরেক আত্মীয় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের কিছুদিন আগেই ভারতে চলে যান। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ৩ আগস্ট রাতে পরিবারসহ দেশ ছাড়েন। তিনি ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর যান। তাঁর পরিবার পৃথক ফ্লাইটে যায় লন্ডনে। তাপসের ভাই যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস (পরশ) সরকার পতনের কয়েক দিন আগে, ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তিনিও দেশে আছেন বলে জানা গেছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও আন্দোলনের সময় সপরিবার সিঙ্গাপুরে চলে যান। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের (বিপু) অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অবশ্য সরকার পতনের পর শুরুতেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিদেশ যাওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদও।
গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ৩০ জন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের আব্দুল্লাহপুর এলাকা থেকে চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাবেক এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীসহ তিনজনকে আটক করে বিজিবি। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা প্রায় ২ কোটি টাকার বিনিময়ে ভারতে যাওয়ার রফাদফা করেছিলেন। তবে তিনি আটকে গেলেও এ সীমান্ত দিয়ে পাড়ি দিতে পেরেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুই ডজনেরও বেশি মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উপদেষ্টা ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং শেখ হাসিনার সাবেক জ্বালানি, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী রয়েছেন।
এছাড়া গণহত্যা এবং অপহরণের মতো অভিযোগেও মামলা হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে। ওইসব মামলার আসামির তালিকায় তার শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামও রয়েছে। একইভাবে নাম রয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতাদের।
তাদেরকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে বিমানবন্দর সূত্র বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছিল। যদিও পরে আবার মি. পলক, মি. সৈকত ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে একই দিনে খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তবে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সম্পর্কে এখনও কিছু জানায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেসময় বিমানবন্দর থেকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এবং ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদকেও আটকের খবর আসে গণমাধ্যমে।
এখন পর্যন্ত যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মণি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও গ্রেফতার হয়েছেন।
সরকারের মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেমন গ্রেফতার হয়েছেন, তেমনি সাবেক অনেক কর্মকর্তাও আটক হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত সেনা কর্মকর্তা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।