দাবি মানার পরও বিক্ষোভ অব্যাহত, ১৮৩ পোশাক কারখানা বন্ধ
পোশাকশিল্পে অস্থিরতা, দাবি মানার পরও শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত। ছবি: সংগৃহীত
শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার পরও তৈরি পোশাক খাতের শ্রম অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আসছে না। শ্রমিকদের প্রায় সব দাবি মেনে নেওয়ার পরও নতুন নতুন দাবি সামনে আনা হচ্ছে। টানা ১৩তম দিনের মতো গতকাল বুধবারও আশুলিয়া এবং গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানায় কাজ না করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে বন্ধ ছিল ১৮৩টি তৈরি পোশাক কারখানা।
এর মধ্যে সাভার-আশুলিয়া-জিরানী এলাকার ৫৪টি ও গাজীপুরের ১২টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। বাকি ১১৭ কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ না করায় ছুটি দেওয়া হয়। এদিকে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে গতকাল গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায় বিগবস করপোরেশন নামে একটি কারখানার গুদামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসময় আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে বাধা দেয় তারা। এ সময় কারখানাটির মালপত্র লুট করা হয়।
‘নো ওয়ার্ক নো পে’ অর্থাৎ কাজ নেই তো মজুরিও নেই ধারায় বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো যত দিন বন্ধ থাকবে ততদিনের মজুরি পাবেন না শ্রমিকরা। এ ঘোষণার পর গতকালই কাজে ফিরতে কারখানায় ভিড় করছেন সাধারণ শ্রমিকরা। তবে শ্রমিক পরিচয় দেওয়া কিছু ‘ষড়যন্ত্রকারী এবং বহিরাগতদের’ কারণে কারখানা খুলতে পারছেন না বলে জানায় মালিক কর্তৃপক্ষ।
বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে জানায়, পোশাকশিল্পকে স্থায়ীভাবে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে প্রায় সব কারখানায় ২০ থেকে ২৫ জনের এজেন্ট নিয়োগ করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। বাইরের ইন্ধনে তারাই সাধারণ শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে কর্মবিরতি, হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে। শিল্পঅধ্যুষিত এলাকায় পোশাক কারখানায় বিক্ষোভ-ভাঙচুরের ঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সতর্কতা হিসেবে অনেক ভবনে বড় করে ব্যানার লেখা রয়েছে– ‘ইহা পোশাক কারখানা নয়।’ একই রকম ব্যানার পোশাকবহির্ভূত অন্যান্য শিল্প-কারখানায়ও ঝুলতে দেখা গেছে।
এদিকে গতকাল পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এতে শ্রম অসন্তোষের পেছনের প্রকৃত ঘটনা জানতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন তিনি।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার কিংবা উদ্যোক্তা বা বিজিএমইএ সব পক্ষই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলে আশা তার।
১৩(১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখার বিষয়ে তিনি বেলেন, শ্রমিকরা মজুরি থেকে বঞ্চিত হোক– এটা তারা চাননি। এ কারণে শ্রমিকদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে কাজে ফেরানোর চেষ্টা করেছেন তারা। তবে বাধ্য হলে কারখানা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবেন– এ রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে সর্বশেষ সমন্বয় সভায়।