দেশব্যাপী কোটাবিরোধীদের আন্দোলন অব্যাহত, সর্বাত্মক ব্লকেডের হুঁশিয়ারি
ছবি: সংগৃহীত
সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতি সংশোধন করার এক দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো দেশজুড়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, বরিশালসহ সারা দেশে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেছে তারা। একই সঙ্গে রাজধানীর শাহবাগ, গুলিস্তান, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, সায়েন্সল্যাব মোড়, চানখাঁরপুল মোড়, আগারগাঁও মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ করে তারা। এতে অচল হয়ে পড়ে যোগাযোগব্যবস্থা। তীব্র যানজট ও চরম ভোগান্তিতে পড়ে বিভিন্ন গন্তব্য যাওয়া নাগরিকরা। তবে আজ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ অনলাইন-অফলাইন গণসংযোগ ও বুধবার সর্বাত্মক ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার (আজ) আমরা সারা দেশের সমন্বয়কারীদের সঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে গণসংযোগ করব। এরপর বুধবারের কর্মসূচি দেব। আমরা সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যেতে পারি। এখন আমরা কেবল অর্ধদিনের কর্মসূচিতে আছি তবে এখানেই সীমাবদ্ধ থাকব না।’
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে গতকাল বিকাল ৪টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় শাহবাগ মোড় এলাকায়। এ সময় সায়েন্সল্যাব, মিরপুর সড়ক, মতিঝিলের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাত ৯টার দিকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে রাস্তা ছাড়ে শিক্ষার্থীরা। এদিকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেয় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফার্মগেট মোড়ে অবস্থান নেয় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া মৎস্য ভবন, বাংলামোটর ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করে। এর আগে বিকাল পৌনে ৪টায় বিভিন্ন হল ও ডিপার্টমেন্ট থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিন, হলপাড়া, ভিসি চত্বর, রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে অবরোধ করে তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটাপ্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এক বিষয় নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটি রাষ্ট্রীয় আদর্শ। সারা বাংলাদেশের সব নাগরিকসহ আমরা তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ। আমরা প্রত্যেকেই সেই আদর্শ ধারণ করি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যেমন বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল, তেমনি আমরাও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করছি। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সারা দেশের ছাত্রসমাজ রাজপথে নেমে এসেছে। আমাদের এ আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। আমরা চাই সরকার আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিক। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাবে। আর যদি দাবি মেনে না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা ঘরে ফিরব না। এদিকে আগারগাঁওয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকাল ৪টায় আগারগাঁও মোড় অবরোধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর-ফার্মগেট এবং মহাখালী-শিশুমেলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং দুই রুটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
গতকাল পুলিশি বাধা ঠেলে জবি শিক্ষার্থীদের অবরোধ , ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ , চট্টগ্রামে সড়ক-রেলপথ অবরোধ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, রাজশাহীতে রেল-সড়ক অবরোধ, কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ, বাকৃবিতে রেলপথ অবরোধ , খুবি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, মহাসড়ক অবরোধ করে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হয়েছে।