ছাগলকাণ্ডের মতিউরের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের ছবি ভাইরাল
মতিউর রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ছবি: সংগৃহীত
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সখ্য নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ব্যাংকপাড়ায়। এরই মধ্যে দুজনের একসঙ্গে ওমরা করাসহ গভর্নরকে শুভেচ্ছা জানানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
একটি ছবিতে দুজনকে হজের এহরাম বাঁধা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। অপর ছবিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর কার্যালয়ে রউফ তালুকদারকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন মতিউর।
জানা গেছে, একটি ছবি ২০২৩ সালে হজের সময়ে সৌদি আরবে তোলা। অপর ছবিটি ২০২২ সালের আগস্টে আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর নিয়োগের পর তাকে শুভেচ্ছা জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে যান মতিউর রহমান। বুধবার ছবি দুটি ভাইরাল হলেও গত কয়েকদিন ধরেই দুইজনের সখ্যর বিষয়ে ব্যাংকপাড়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা চলছে।
মতিউর রহমান ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ওই সময় অর্থসচিব ছিলেন। তার জোর সুপারিশে তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হয়েছিলেন এমন আলোচনার মধ্যে এই ছবি সামনে এল। জানা গেছে, একটি ছবি ২০২৩ সালে হজের সময়ে সৌদি আরবে তোলা। অপর ছবিটি ২০২২ সালের আগস্টে আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর নিয়োগের পর তাকে শুভেচ্ছা জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংকে যান মতিউর রহমান। বুধবার ছবি দু’টি ভাইরাল হলেও গত কয়েকদিন ধরে দু’জনের সখ্যতা বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা চলছে।
গত রোববার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে গভর্নরের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকের মাধ্যমে প্রশ্ন করলে ওই দিনই তিনি তা গভর্নরের কাছে পৌঁছে দেন বলে সমকালকে জানান। গভর্নরের কাছে সেখানে জানতে চাওয়া হয়- তিনি অর্থ সচিব থাকা অবস্থায় মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক বানাতে হস্তক্ষেপ এবং মতিউরের মাধ্যমে বেনামে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে এ বিষয়ে তার মন্তব্য কী?
এ বিষয়ে বুধবার টেলিফোন করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গভর্নর জানিয়েছেন এসব সঠিক না।’
মতিউরের দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে গত সোমবার সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত রোববার কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সভাপতির পদ থেকে তাকে প্রত্যাহার করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। দুদকের অনুরোধে মঙ্গলবার মতিউর, তার দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের ব্যাংক ও বিও অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার মতিউর, তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহমদ তৌফিকুর রহমানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
অনিয়ম–দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ায় অনেক আগ থেকেই এনবিবারে আলোচিত মতিউর রহমান। এর আগে বিভিন্ন সময়ে দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেও শেষ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এবার ঈদুল আজহার আগে এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর পক্ষের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনায় আসেন।
ড. মো. মতিউর রহমানের দুই স্ত্রী হলো লায়লা কানিজ ও শাম্মী আখতার শিবলী। আর পাঁচ সন্তানের মধ্যে প্রথম স্ত্রীর পক্ষের সন্তান ফারজানা রহমান ইপ্সিতা, আহাম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব, দ্বিতীয় স্ত্রীর পক্ষের সন্তান ইফতিমা রহমান মাধুবী, মুশফিকুর রহমান ইফাত ও ইরফানুর রহমান ইরফান। ছাগলকাণ্ড নিয়ে আলোচনার মধ্যে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তারা দেশ ছেড়েছেন এমন আলোচনার মধ্যে কর্মস্থলেও যাননি তিনি।