ঈদযাত্রায় ১৩ দিনে সড়কে ঝরেছে ২৬২ প্রাণ
ফাইল ছবি
পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে সড়ক দুর্ঘটনায় সারাদেশে ২৫১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬২ জন নিহত হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫৪৩ জন। এই সময়ে ৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছে। ১৬টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ৮ জন আহত হয়েছে।
এই সময়ে ১২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১০৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৯.৬৯ শতাংশ। সেই সঙ্গে ১৩ দিনের দুর্ঘটনায় ৯৯৮ কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকার মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে সংবাদ মাধ্যমে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো ‘ঈদুল আজহা উদযাপনকালে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে’ এসব তথ্য পাওয়া যায়।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা গেছে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে ভোরে ৬.৩৭ শতাংশ, সকালে ২৩.১০ শতাংশ, দুপুরে ২৭.৪৯ শতাংশ, বিকেলে ১৭.১৩ শতাংশ, সন্ধ্যায় ৫.৫৭ শতাংশ এবং রাতে ২০.৩১ শতাংশ।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪০.৯০ শতাংশ, মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ২৭.২৭ শতাংশ এবং অন্য যানবাহন দ্বারা মোটরসাইকেলে চাপা/ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১.৮১ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ২৮.৩৫ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছর। ৪৭.৭৬ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর এবং ২৩.৮৮ শতাংশের বয়স ৩৬ থেকে ৬০ বছর।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৭২টি দুর্ঘটনায় ৬৭ জন নিহত হয়েছে। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৮টি দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত হয়েছে। একক জেলা হিসেবে দিনাজপুরে সবচেয়ে বেশি ১৬ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম শরীয়তপুর, রাঙামাটি, সুনামগঞ্জ, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম জেলায়। এই ৫টি জেলায় স্বল্প মাত্রার কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ১৮টি দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছে।
ঈদুল আজহা উদযাপনকালে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানব সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ৯৯৮ কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকার মতো। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার অনেক তথ্য অপ্রকাশিত থাকে, সেজন্য এই হিসাবের সঙ্গে আরও ৩০ শতাংশ যোগ করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল রোড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম (আইআরএপি) এর মেথড অনুযায়ী হিসাবটি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ যানবাহন বা প্রপার্টি ড্যামেজ হয়েছে তার তথ্য না পাওয়ার কারণে প্রপার্টি ড্যামেজের আর্থিক পরিমাপ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
ঈদ উদযাপনকালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ২০.১৫ জন নিহত হয়েছে। গত বছরের ঈদুল আজহায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ২১.৬ জন। এই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবছর প্রাণহানি কমেছে ৬.৭১ শতাংশ। তবে এটা কোনো টেকসই উন্নতির সূচক নির্দেশ করছে না। কারণ সড়ক পরিবহন খাতে ব্যবস্থাপনাগত কোনো উন্নতি হয়নি। তবে গত বছরের ঈদুল আজহা উদযাপনকালের তুলনায় এবছর বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে ১৩.৩১ শতাংশ।
ঈদযাত্রায় রাজধানী ঢাকা থেকে কমবেশি ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ঘরমুখী যাত্রা করেছেন এবং প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ আন্তঃজেলায় যাতায়াত করেছেন। উত্তরবঙ্গগামী সড়কের চন্দ্রা ও টাঙ্গাইলে যানজট হয়েছে। পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও যানজট হয়েছে, তবে অসহনীয় মাত্রায় হয়নি। অনেক পরিবহন মালিক যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করেছে। বিআরটিএ এই ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ট্রেনে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। টিকিট কালোবাজারি হয়েছে। নৌ-পথে স্বস্তি থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। ঈদের ফিরতি যাত্রায় বাসে, লঞ্চে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ঈদ উদযাপনকালে যে সব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেনি, শুধু আহত হয়েছে- সেসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই গণমাধ্যমে আসেনি। ফলে দুর্ঘটনায় আহতের প্রকৃত চিত্র জানা যায়নি।
সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।