বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে নগরবাসী
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ঢাকায় গতকাল রোববার সকাল থেকে আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। গতকালদিবাগত রাত থেকেই শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক সড়কে পানি জমে গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী ও কর্মজীবী মানুষ। তবে, সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছিল এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা।মুষলধারে বৃষ্টির কারণে পথে রিকশার সংখ্যাও ছিল অত্যন্ত কম।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে। জাওয়াদ দুর্বলহয়ে ইতিমধ্যে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ঢাকায় সূর্যের দেখা মিলতে পারে আগামীকাল।
এদিকে অল্প বৃষ্টিতেই ঢাকার যেসব এলাকায় পানি জমে যায়, সেসব এলাকায় রীতিমতো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।রাজধানীর বসুন্ধরা, গ্রিন রোড, ধানমন্ডি, বাড্ডা, রামপুরা, হাতিরঝিল, নাবিস্কোসহ বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমে গেছে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ৩০০ ফিট যাওয়ার রাস্তা, মগবাজার ওয়ারলেস গেট থেকে মধুবাগে যাওয়ার রাস্তা, মিরপুর দশনং থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত সড়কের পুরাটাই পানিতে তলিয়ে যায়।
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলশান, বাড্ডা, কুড়িল বিশ্বরোড, সরকারবাড়ি, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়াও মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, পল্টনসহ আশপাশের এলাকার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীরনিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ক্রমান্বয়েদুর্বল হতে পারে।
ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলেজানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
সকাল নয়টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে কারওয়ান বাজারে অফিসে আসার পথে রিকশা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েনশাহেরীন আরাফস্ত। তিনি বলেন, সকাল আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত পথে ঘুরে ঘুরেও তিনি কোন যানবাহন পাননি।
পেশায় ড্রাইভার রিপন জানান, সকাল সাতটায় মিরপুর থেকে বের হয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আসতে তার লেগেছে প্রায়আড়াইঘন্টা।
সাদিকা নামের এক গৃহকর্মীকে দেখা গেছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিজতে। জানা যায়, কর্মস্থলে যাবার জন্য উপযুক্ত কোন বাহনই তিনিপাচ্ছেন না।
ধানমন্ডি ও গ্রিন রোডে বিভিন্ন জায়গায় অফিসগামীদের বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে যেতে দেখা গেছে। রিকশা না পেয়ে হেঁটেই কর্মস্থলেযাচ্ছেন অনেকে।
এদিকে এই বৃষ্টির প্রভাবে রাজধানীর অনেক এলাকাতেই বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাব থাকবে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত। দেশেরসমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের পথে যাতায়াতকারী সব জাহাজ চলাচল রবিবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে।
এদিকে জাওয়াদের প্রভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, কলকাতা, হুগলি, বীরভূম, বাঁকুড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমানে অঝর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশলাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদেও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে।
শনিবারই শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। রবিবার সকালে তা আরও শক্তিক্ষয় করে সাধারণনিম্নচাপে পরিণত হয় এবং ঘণ্টায় ১১ কিলোমিটার গতিবেগে ওড়িশ্যা উপকূলের দিকে অগ্রসর হয়।