সিনহা হত্যা মামলা: আসামিদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
আলোচিত সেনাবাহিনীর মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি) ঘোষণা করা হবে। গত ১২ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ইসমাইলের আদালত রায়ের এ দিন ধার্য করেন।
মেজর সিনহা হত্যা মামলায় আসামি এবং তাদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:
প্রদীপ কুমার দাশ: প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফ মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ। তিনি মেজর সিনহা হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি। তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, প্ররোচনা ও জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। হত্যাকান্ডের ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগও তোলা হয় তার বিরুদ্ধে।
লিয়াকত আলী: ইন্সপেক্টর মো. লিয়াকত আলী। বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক আইসি। তিনি সিনহা হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি। অভিযোগপত্র বলছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে সরাসরি হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করেন লিয়াকত আলী।
নন্দদুলাল রক্ষিত: নন্দদুলাল রক্ষিত বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের এসআই। মামলার ৩ নম্বর আসামি তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীর সহযোগী হিসেবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সিনহা হত্যাকান্ডে সহযোগিতা করেছেন। ওসি প্রদীপের অবৈধ আদেশে সিনহার প্রাইভেটকার থেকে ইয়াবা ও গাজা উদ্ধার না হওয়া সত্ত্বেও ভুয়া জব্দ তালিকা করেছেন। ভিক্টিম সিনহা ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সিফাতের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মিথ্যা মামলা করেছেন।
নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আইয়াছ উদ্দিন: নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আইয়াছ উদ্দিন টেকনাফ থানা পুলিশের সোর্স এবং সাজানো মামলার সাক্ষী। এই তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘটনার শুরুতে তারা ওসি প্রদীপ ও লিকায়তের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। সিনহাকে ডাকাত সাজিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন। তাতে ব্যর্থ হয়ে সিনহার চলাচলের খবর লিয়াকতকে ফোনে জানিয়ে দেন। পরিকল্পনা ও যোগসাজশের মাধ্যমে তারা হত্যাকান্ড ঘটনা।
লিটন মিয়া, সাফানুর করিম, কামাল হোসেন আজাদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন: এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন আজাদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা আহত গুলিবিদ্ধ সিনহাকে যেন কেউ সাহায্য করতে না পারে সে জন্য অস্ত্রসহ ঘটনাস্থল পাহারা দেন। তারা নাক, চোখ বেঁধে সিনহার সঙ্গী সিফাতকে নির্যাতনে সহায়তা করেন। হাসপাতালে নেওয়ার সময় আসামিরা সিনহাকে বস্তার মতো ছুড়ে গাড়িতে তোলে।
রুবেল শর্মা ও সাগর দেব: কন্সটেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব কেটনাফ মডেল থানার সাবেক সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, ওসি প্রদীপের করা শতাধিক বন্ধুকযুদ্ধে স্বশরীরে অংশগ্রহণকারী এই দুই কনস্টেবল। ঘটনার দিন মাদক নাটক সাজানো, সিফাতকে মারধর এবং ওয়াটার থেরাপি দিয়ে নির্যাতন করেন রুবেল শর্মা ও সাগর দেব।
শাহজাহান আলী, রাজীব হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ইমন: এসআই মো. শাহজাহান আলী, কনস্টেবল রাজীব হোসেন এবং আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ইমন এই তিন এপিবিএন সদস্য ঘটনার দিন রাত ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টের দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, এসআই মো. শাহজাহান আলী সিফাতকে রশি দিয়ে বেঁধে এবং অন্য দুই জন সিনহার পড়ে থাকা দেহ ঘেরাও করে রেখে হত্যাকান্ডে সহায়তা করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করে।
পরে ওই বছর ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
ওই বছরেরই ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। এতে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে।
গত ২৭ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। এরপর গত ২৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। শেষ হয় গত ১ ডিসেম্বর। পরে গত ৬ ও ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় আসামিদের ৩৪২ ধারায় বক্তব্য গ্রহণ। গত ১২ জানুয়ারি আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবীর অসমাপ্ত যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রায়ের দিন ৩১ জানুয়ারি ধার্য করা হয়।
কেএফ/