চিকিৎসকদের নিয়ে কী বলেছেন মির্জা আযম?
বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়েছে ডক্টরস ফাউন্ডেশন
দেশের চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের নিয়ে সমালোচনা করায় তোপের মুখে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মিজা আযম। তাঁর সেই সেই বক্তব্যকে অসত্য বলে প্রত্যাহারের আহ্বান করেছে চিকিৎসকের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ডা. মো. শাহেদ রফি পাভেল ও সদস্য সচিব ডা. তাজিন আফরোজ শাহ্ স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে মির্জা আযম এমপিকে অসত্য মানহানিকর, বিকৃত এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য তিনি বাংলাদেশের চিকিৎসক ও প্রকৌশলী এই দুটি মহান পেশাজীবী সমাজের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন, ক্ষমা চাইবেন এবং বক্তব্যটি প্রত্যাহার করবেন।
রবিবার (৩০ জানুয়ারি) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয় ‘সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযম তার এক সাম্প্রতিক বক্তব্যে চিকিৎসক ও ইঞ্জিনিয়ারদের সামগ্রীকভাবে 'চোর' বলে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমরা মির্জা আযমের এই অসত্য এবং মানহানিকর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধে চিকিৎসকদের অবদান যেখানে জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে, করোনা মহামারির এই ক্রান্তিকালে চিকিৎসক সমাজ যখন শারীরিক ও মানসিকভাবে পর্যুদস্ত তখন তার মতো একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের এমন মন্তব্য চিকিৎসক সমাজের মাথা নিচু করে দিয়েছে। বিডিএফ মনে করে, তার এমন মন্তব্য শুধুমাত্র সস্তা জনপ্রিয়তা পাবার অভিপ্রায় ছাড়া আর কিছু নয়। এই অসত্য মানহানিকর, বিকৃত এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের জন্য তিনি বাংলাদেশের চিকিৎসক ও প্রকৌশলী এই দুটি মহান পেশাজীবী সমাজের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন, ক্ষমা চাইবেন এবং বক্তব্যটি প্রত্যাহার করবেন।
কী বলেছিলেন মির্জা আযম?
মির্জা আযম এমপি নিজের নির্বাচনী এলাকা জামালপুরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন। তার বক্তব্যটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই অনুষ্ঠানে মির্জা আযম বলেন, ‘যারা মেট্রিকে ফাস্ট ডিভিশন পায় বা ভালো রেজাল্ট করে, সবচেয়ে ভালো ছেলে-মেয়ে তারা কোথায় যায় জানেন? তারা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) যায় আর দ্বিতীয় মেধাবীরা যায় মেডিকেলে। সবচেয়ে ব্রিলিয়্যান্ট ছাত্র-ছাত্রীরা হয় বুয়েটে যায়, না হয় মেডিকেলে যায়। বুয়েট থেকে যারা পাস করে, পাস করার পর চাকরি হয়। বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পর বাবা-মাও কিন্তু আলোকিত বাবা মা। সম্মানি বাবা-মা ইঞ্জিনিয়ার-ডাক্তারের বাবা-মা। কিন্তু যখন চাকরিতে যোগদান করে প্রথমে পোস্টিং হয় কোথায় দেখা যায় রোডস এন্ড হাইওয়ে বিভাগে, কিংবা এলজিইডিতে কিংবা পিডব্লিউডিতে। এই যে চাকরিতে ঢুকল। ঢোকার পর দিন থেকে নিজের প্রথম বেতন নেওয়ার আগেই চুরির টাকা হাতে পায়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার এডিপি হয় প্রতি বছর। এই আড়াই লাখের ১৫ শতাংশ টাকা বাংলাদেশের ১২০০ ইঞ্জিনিয়াররা খায়। আড়াই লাখ টাকার ১৫% হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা ১২০০ ইঞ্জিনিয়ার প্রতিবছর লুট করে খায়। এরা কারা? ওই সবচেয়ে ব্রিলিয়্যান্ট যারা। তাদের হার নির্দিষ্ট করা একটা বিল আনতে গেলে ৫ % ঘুষ দিতে হয়। যতদিন যাচ্ছে পরিমাণটা আরও বাড়ছে। এই হলো সনামধন্য ব্রিলিয়্যান্ট ছাত্র-ছাত্রীরা।’
এরপর মির্জা আযম চিকিৎসদের নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় চোর কারা জানেন? দ্বিতীয় শ্রেণির চোর হচ্ছে ডাক্তার। একজন শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তি হয়। মেডিকেলে ভর্তি হয় কারা? সেকেন্ড ব্রিলিয়্যান্ট যারা। তারা যখন মেডিকেলে ভর্তি হয় আল্লাহর কাছে বাবা-মা বলে, পোলা আমার সেবা করব। মৃত মানুষকে জীবত করবে। সোয়াবের আশায় মেডিকেলে ভর্তি হয় মেধাবীরা। ডাক্তার হওয়ার পর থেকে চাকরিতে পোষ্টিং হয় দেখা গেল মাদারগঞ্জে। সেখানে পোস্টিং থাকলেও ক্যামনে চাকরিটা না করে বেতন তুলব এই ধান্দায় থাকে। যারা ওখানেই চাকরি করে তারা কি করে? গরীব মানুষের জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়েছে হাসপাতালে। দেখা যায় ১০০ রোগী যদি থাকে সেই ১০০ রোগীর জন্য প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট বরাদ্দ আছে। সেই ১০০ রোগীর বরাদ্দ লুট করে খায়। রোগীদের বিছানাপাতি পরিস্কার করার জন্য একটা বরাদ্দ থাকব, সেই বরাদ্দ থেকেও চুরি করে মাসে একদিনও পরিস্কার না করে, সেই ধোলাই করার টাকা খেয়ে ফেলল। আর হাসপাতালের পরিবেশ দিতে থাকলে দেখা যাবে সবচেয়ে নোংরা। কোনো মানুষ যাতে হাসপাতলে না যায়। সরকার শত শত কোটি টাকা খরচ করে হাসপাতালে। ডাক্তার-নার্স হাজার হাজার কোটি টাকা বেতন নেয়। কোনো মানুষ স্বাভাাবিক চিকিৎসা বা সেবা পায় না ওই হাসপাতাল থেকে।’
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের কোনো ওয়ার্ডে যদি যান দেখবেন বেডে রক্ত লেগে রয়েছে, কিংবা ওষুধ পড়ে রয়েছে। বসার মতো জায়গা নাই। প্রাইভেট ক্লিনিকে গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাক আর না যাক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পাওয়া যায়। নিজের বাবা অসুস্থ, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে পরিস্কার বিছানা প্রত্যাশা করবে; কিন্তু জামালপুর সদর হাসপাতালে সেটা পাওয়া যায় না। অথচ সেই জায়গায় হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেগুলো লুটপাট করছে।’
মির্জা আযম বলেন, ‘বাংলাদেশে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। স্বাস্থ্য খাতে বড় দুর্যোগ করোনা। করোনা আসার পর নিজেরা ১ কোটি টাকা খরচ করে জামালপুর সদর হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব করেছি। সরকারের হাজার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ল্যাব চালাতে প্রতিদিন ৫-১০ হাজার টাকা খরচ আছে সেই টাকাও আমরা চাঁদা তুলে দিচ্ছি নিজেরা। সরকার থেকে আসে না। এই হলো সরকারের সিস্টেম!’
এসএম/এসআইএইচ/এপি