চলতি বছর শেষ হচ্ছে ১৬ রাষ্ট্রদূতের মেয়াদ, যারা নিয়োগ পাবেন
ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছর বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশের ১৬ জন রাষ্ট্রদূতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে আট জন পেশাদার কূটনীতিক অবসর-পূর্বকালীন (প্রি-রিটায়ারমেন্ট লিভ-পিআরএল) ছুটিতে যাবেন। বাকি আট জনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবে।
এসব রাষ্ট্রদূতের মেয়াদ যদি নতুন করে বাড়ানো না হয়, তবে মধ্যম সারির অনেক কূটনীতিকের রাষ্ট্রদূত হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রদূত হয়েছেন। কিন্তু তাদের জ্যেষ্ঠ ১৭তম ও ১৮তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তা এখনও রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়ন পাননি। ওই রাষ্ট্রদূতদের মেয়াদ বৃদ্ধি না পেলে জ্যেষ্ঠদের বড় একটি অংশ রাষ্ট্রদূত হতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পেশাদার অথবা অপেশাদার, যাকেই রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে, ওই ব্যক্তি যেন যোগ্য হন। যোগ্য ব্যক্তিকে পাঠালে লক্ষ্য অর্জিত হয়। কিন্তু শুধু পছন্দের ভিত্তিতে পাঠানো হলে দেশের লক্ষ্য অর্জিত হয় না।’
অনেক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানো হয়- যারা পদটির মর্যাদা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা যোগ্য নন, তারা দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ রাখতে পারেন না।’
হুমায়ুন কবির আরও বলেন, ‘আমার নীতিগত অবস্থান হচ্ছে-সকারোর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। আমি মনে করি, মেয়াদ বাড়ানোর চর্চা থেকে আমাদের বের হয়ে আসা দরকার। এটি দক্ষতার হানি ঘটায়। পেশাগত দক্ষতার ভিত্তিতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেওয়া উচিত।’
আমাদের দেশের কাজের ধরন এবং বাইরের দেশের কাজের ধরনের মধ্যে মৌলিক ভিন্নতা আছে। দেশে যে ভালো কাজ করছে, একই ব্যক্তি বিদেশে গিয়ে ভালো করবে, এটি নাও হতে পারে। যারা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাদের এই উপলব্ধিটা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
যাদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে: পেশাদার কূটনীতিকদের মধ্যে মো. মনিরুল ইসলাম (ইতালি) ও আসুদ আহমেদের (গ্রিস) পিআরএল শুরু হবে এপ্রিলে। এছাড়া মো. আল্লামা সিদ্দিকী (অস্ট্রেলিয়া), মাহবুব হাসান সালেহ (বেলজিয়াম), রেজিনা আহমেদ (পর্তুগাল), সাইদা মোনা তাসনিম (যুক্তরাজ্য), মোহাম্মাদ আব্দুল মুহিত (নিউ ইয়র্ক, জাতিসংঘ) ও মো. মুস্তাফিজুর রহমানের (ভারত) পিআরএল শুরু হবে আগামী ডিসেম্বরে।
আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মধ্যে খলিলুর রহমানের (কানাডা) মেয়াদ শেষ হবে এপ্রিলে। এছাড়া মোহাম্মাদ সুফিয়ুর রহমান (সুইজারল্যান্ড) ও মেজর জেনারেল মো. আশিকুজ্জামানের (কুয়েত) মে মাসে, সুলতানা লায়লা হোসেন (পোল্যান্ড) ও মোহাম্মাদ আব্দুল হাইয়ের (থাইল্যান্ড) জুনে, শাহাবুদ্দিন আহমদের (জাপান) জুলাইয়ে, মো. ফজলুল বারীর (ইরাক) সেপ্টেম্বরে এবং কামরুল আহসানের (রাশিয়া) মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে।
‘প্রয়োজন’ বা ‘প্রভাবের’ কারণে এই রাষ্ট্রদূতদের কারও কারও মেয়াদ বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
যারা রাষ্ট্রদূত হতে পারেন: সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অথবা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা রাষ্ট্রদূত হওয়ার যোগ্য। পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রদূত হয়ে থাকেন এবং সেটি চুক্তিভিত্তিক নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাইরে থেকে যোগ্য যে কাউকে চুক্তিভিত্তিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন রাষ্ট্রপতি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৬০টি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস আছে এবং সেখানে পররাষ্ট্র ক্যাডার বা বাইরে থেকে নিয়োগ দিয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি।
মোট রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ পররাষ্ট্র ক্যাডার থেকে এবং সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিধান আছে এবং সাধারণভাবে তাদের তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এটি সবসময় অনুসরণ করা হয় না বলেও জানায় সূত্রটি।