‘আমার ছেলে অ্যাকসিডেন্টে মরে নাই’
বাবা হয়ে ছেলের লাশ বহন করা কতটা বেদনার সেটা কেউ বুঝবেন না। আমি ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করেছিলাম। আমার অসুস্থতায় ছুটে যাবে আমার ছেলে। আমার মৃত্যুর সময় ছেলে দাড়িয়ে বলবে আমার বাবার কোন দেনা পাওনা থাকলে আমাকে বলবেন আমি শোধ করব সেটা আর বলবে না। আমি বাবা হয়ে আজ সেটা বলছি। আমি সাধারণ মানুষ। আমার শিক্ষা-দিক্ষা কম। যাই দেখেছি শুনেছি আমার ছেলে অ্যাকসিডেন্টে মরে নাই, আমার ছেলেকে হয়তোবা কেউ আহত করেছে আমার ধারণা একথাগুলো বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিক হাবীবুর রহমান হাবীব এর বাবা মোহাম্মদ পিয়ার মিয়া।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে হাবীবুর রহমান এর অকাল মৃত্যুতে শোকসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে ছেলের স্মৃতিচারণ করে এভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন হাবীব এর বাবা। স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিআরইউ সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরীসহ সিনিয়র সাংবাদিক নেতারা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীবুর রহমান হাবীব এর বাবা মোহাম্মদ পিয়ার মিয়া বলেন, আপনারা হয়তো অনেকেই বুঝবেন না এ শোকের ব্যথা। বাবা হয়ে ছেলের লাশ কাঁধে নিতে যে কতটা বেদনার সেটা অকেই বুঝবেন না। যার পরিবারে হয়েছে তারা হয়তো কিছুটা বুঝবেন, সবাই বুঝবেন না।
তিনি বলেন, আমি বড় আশা করে ছেলেটাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করেছিলাম। আমার মৃত্যুর পর আমার জানাজায় দাড়িয়ে আর ছেলে দাড়িয়ে বলবে কারো কাছে দেনা পাওনা থাকলে আমাকে বলবেন, আমি দেব। একথা বলে কাঁদতে থাকেন। আমার ছেলের আশাছিল আমাকে চিকিৎসা করার জন্য ডাক্তারের কাছে নেব; সেটা আল্লাহর ইচ্ছা।
পিয়ার মিয়া বলেন, আমি সাধারণ মানুষ। আমার শিক্ষা-দিক্ষা কম। যাই দেখেছি, শুনেছি আমার ছেলে অ্যাকসিডেন্টে মরে নাই। আমার ছেলেকে হয়তোবা কেউ আহত করেছে, আমার ধারণা। এই তদন্তটা যাতে হয়, এই বিচার আপনাদের কাছে রেখে গেলাম। আপনারা যারা সাংবাদিক আছেন, তাদের কাছে চাওয়া আমার ছেলের মতো আর কেউ যেন এরকম প্রাণ না হারায়। আপনাদের বাবা-মা যেন কোন দিন আপনাদের না হারায়।
স্মৃতিচারণ করে সাংবাদিক হাবীব এর স্ত্রী হাসি আক্তার রিমি বলেন, উপস্থিত অনেকেই হয়তো আমাকে চেনে না। আমি সবাইকে চিনি। আওয়ামী লীগের যারা আসছেন তাদের প্রত্যেককে আমি চিনি। হাবীব তার পেশার প্রতি কতটা ডেডিকেটেড ছিল সেটা আমি জানি। আপনারা হাবীবকে ভুলে যাবেন না কেউ। ও যতটা ডেডিকেটেড ছিল কাজ নিয়ে, আমি তাকে স্পেস করে দিতাম, তুমি তোমার কাজ গুলো। ওরা প্যাশন ও কাজের প্রতি ভালবাসা দেখেই আমার ভাল লাগত।
এসএম/