বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সিইসির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে সুজন
সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচার’ করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা তাদের এ ভাবনার কথা জানান এবং উত্থাপিত অভিযোগের প্রতিবাদ জানান। নূরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে তারা বলেন, ‘আজ হোক কাল হোক, বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
গত বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসির (আরএফইডি) এক অনুষ্ঠানে কে এম নূরুল হুদা সুজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগসহ নানা সমালোচনা করেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে এবং সিইসির বক্তব্যের প্রতিবাদে সুজন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘একটি বিতর্কিত নির্বাচনের অকাট্য কিছু প্রমাণ ও তথ্য প্রকাশ করায় সুজন ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের ওপর কে এম নূরুল হুদার ক্ষিপ্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তা ছাড়াও গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে নূরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার যে আবেদন করেন, তাতে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ সুজনের অনেক নেতৃবৃন্দ ছিলেন স্বাক্ষরকারী। আর এ জন্যই সিইসি হুদার গাত্রদাহ এবং তার অপকর্ম ও পক্ষপাতদুষ্টতার কলঙ্ক আড়াল করতেই তিনি আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। এ কারণেও কে এম নূরুল হুদা সুজন ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে আমাদের ধারণা।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচন কমিশনের সাথে ড. বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনোদিন ছিলও না। তিনি কমিশন থেকে কখনো কোনো কাজ নেননি, অসমাপ্ত রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। অর্থাৎ ড. মজুমদারের বিরুদ্ধে, সিইসির নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কান কথার ভিত্তিতে উত্থাপিত, এক কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ এবং কাজ নিয়ে কাজ না করার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাই সিইসি হুদাকেই এসব অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। একইসঙ্গে জবাব দিতে হবে–তার কাছে এ সম্পর্কে কোনোরূপ তথ্য থাকলে তিনি কেন তা প্রকাশ করলেন না? কেন অভিযোগটি তদন্ত করলেন না? দুর্নীতি দমন কমিশনেই বা কেন তা প্রেরণ করলেন না?’
সিইসি নূরুল হুদাকে ‘খলনায়ক’ বললেন বদিউল আলম মজুমদার
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার কথার জবাব দিতে গিয়ে তাকে ‘খলনায়ক’ বললেন বদিউল আলম মজুমদার। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে দুদিন আগে সিইসি নুরুল হুদার দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে বদিউল আলম টিআইবির গবেষণা, বিবিসির খবরের বরাত দিয়ে বলেন, ‘অনেক অনিয়ম হয়েছে। যেগুলোর বিচার হয়নি। বিচার করার অভিপ্রায়ও তাদের ছিল না। আমাদের দুর্ভাগ্য, এরকম একজন খলনায়ককে নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যে আইনটা করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত এরকম লোকদের নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
সুজন সম্পাদক সিইসির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবে কি না-এ প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আদালতে গেলে রিমেডি পাওয়া যাবে কি না? বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা বিবেচ্য বিষয়। তবুও আলোচনা করব। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। অবশ্যই মানহানি হয়েছে। শুধু আমার নয়, পুরো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের মানহানি হয়েছে।’
সুজন কাজ পাওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে, কথা বলেছে- এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘সুজন কোনোদিনই বা আমি নিজে বা আমাদের প্রতিনিধি কাজ পাওয়ার ব্যাপারে কোনো আলাপ হয়নি। চিঠিও দেয়নি। চিঠি দেওয়া হলে প্রকাশ করেন না কেন। এসব বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
সংবাদ সম্মেলনে ইসির আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার যা বলেছেন, আমি আশ্চর্য হইনি। একটা পদে থাকলে তার যখন সমালোচনা করা হয়। সমালোচনার পাল্টা যদি কোনো সদুত্তর না থাকে, কৃতকার্যের ব্যাখ্যা না থাকে, তবে সবচেয়ে সহজ পন্থা হল, সমালোচনা এড়িয়ে গিয়ে সমালোচককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। আমরা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ যে এনেছি, আমার নিশ্চিত বিশ্বাস এজন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘বর্তমান সিইসি নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের যে দুর্নাম জুটিয়েছেন তার জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিৎ।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সাবেক বিচারপতি এমএ মতিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ।
এপি/এসএ/