শীত কমতে পারে দুয়েক দিনের মধ্যেই
সারাদেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। দেশের কোথাও কোথাও বইছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। রাজধানী ঢাকায়ও অনুভূত হচ্ছে শীতের তীব্রতা।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে। এ দুটি স্থানে তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সকালে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি, যা শুক্রবার ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ ঢাকাপ্রকাশকে জানান, তাপমাত্রা আর কমার আশঙ্কা নেই। শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা না বাড়লেও অব্যাহত থাকবে আরও দুয়েক দিন। এরপর থেকেই তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলে। আর তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) থেকেই উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। তবে শনিবার তা আরও বিস্তৃত হয়।
কুড়িগ্রামে জেলা জুড়ে বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশা আর হিম ঠান্ডা বাতাসে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, শনিবার সকাল ৯টায় এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন পরিস্থিতি আগামী সোমবার পর্যন্ত থাকতে পারে। শুক্রবার এখানকার সর্বনিন্ম তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শীতের তীব্রতা বাড়ায় বেশি কষ্টে পড়েছে জেলার ধরলা, দুধকুমার,গঙ্গাধর ও ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীর চরাঞ্চল ও নদী পাড়ে বসবাসকারী মানুষ।
জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের কারণে বোরো বীজতলা ও আলু ক্ষেত নিয়ে শংকায় রয়েছেন কৃষক। তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে কৃষকরা করছেন বোরো রোপনের কাজ। কুয়াশার কারণে হেড লাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলাচল করে যানবাহন।
কুড়িগ্রামের হলোখানা ইউনিয়নের কৃষক আবদার হোসেন ও ফুলবাড়ী উপজেলা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক তৈয়ব আলী জানান, এবারে অনেক খরচ করে আলু লাগিয়েছি। তীব্র ঠান্ডার কারণে সদ্য বেড়ে ওঠা আলু ক্ষেত নিয়ে চিন্তায় আছি।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শামসুদ্দিন মিঞা জানান, শৈত্যপ্রবাহ ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় আবাদের তেমন কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছেন, ঠান্ডাজনিত রোগ বিশেষ করে জ্বর,সর্দি, কাশি নিয়ে হাসপাতালে অনেকে ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, এখন পর্যন্ত জেলার ৯ উপজেলায় শীতার্তদের জন্য ৩৫ হাজার ৭০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন থেকে পাওয়া ৬ হাজার সোয়েটার ও ৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়েও চলছে মাঝারি শৈতপ্রবাহের দাপট।
তেতুঁলিয়া আবহাওয়া অফিস জানায়, শনিবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে চলতি বছর শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কয়েক দিন ধরে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কারণে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আকাশ পরিষ্কার থাকায় বাতাসের গতিবেগও বেড়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সন্ধ্যার পর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন দৈনন্দিন খেটে খাওয়া কর্মজীবীরা।
তেতুঁলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো রাসেল শাহ্ জানিয়েছেন, জেলায় শীতের দাপট বাড়তে পারে আগামী দু-এক দিনে। আরও কমবে তাপমাত্রা। তবে কুয়াশার প্রভাব কিছুটা কমলে দেখা মিলবে রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশের। দুই দিন পর আবারও তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে।
এসএন