জমি অধিগ্রহণ থেকে আর্থিক লাভবানের সুযোগ নেই: দীপু মনি
চাঁদপুরে সরকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে শিক্ষামন্ত্রীর পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের আর্থিক সুবিধা নেওয়ারে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলছেন, এই জমি অধিগ্রহণ থেকে তার বা তার পরিবারের আর্থিক ভাবে লাভোবান হওয়ার সুযোগ নেই।
শিক্ষামন্ত্রীর পরিবার ও ঘনিষ্টজনদের কারসাজিতে ১৯৩ কোটি টাকার জমি ৫৫৩ কোটি টাকায় অধিগ্রহণের অভিযোগ ওঠার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন দীপু মনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগেই প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরে এসেছিলো, সেটা খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। কারণ শাবিপ্রবির বিষয়টি নিয়ে তখন আমি অনেক বেশি ব্যাস্ত ছিলাম। এরপরে একটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়। আমাকে তার ক্লিপ পাঠান একজন। এরপর আজকে দেশের প্রধান একটি দৈনিকে সংবাদ পরিবেশন হয়েছে। বলা হয়েছে, চাঁদপুরে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সেটার জন্য জমি অধিগ্রহণের অনেক বেশি মূল্য ধরা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, সেখানে সরাসরি আমাকে না বললেও আমার ভাইকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী অভিযোগের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, চাঁদপুরে কোথাও ক্রয় সূত্রে আমার কোনো জমি নেই। উত্তরাধীকার সূত্রে হয়তো আমার পৈত্রিক ভিটায় জমি পেয়ে থাকতে পারি। কিন্তু সেখানে আমার নিজের কোনো জমি নেই।
যে জমিটি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, সেখানে আমার ভাইয়ের বিষয় বলা হয়েছে। আমার ভাই একজন চিকিৎসক। তিনি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি একটি হাসপাতাল ও একটি বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে কিছু জায়গা কিনেছিলেন। যখনই অধিগ্রহণের কথা বলা হয়, তখনই তিনি জমিটি বিক্রি করে দেন, হস্তান্তর করে দেন।
দীপু মনি বলেন, পরিবার বা ঘনিষ্ঠজন বলতে যাদের কথা বলা হচ্ছে, তারা কেউই রক্তের দিক থেকে আমার পরিবারের সদস্য নন। কিন্তু তারা আমার রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। আমার পরিবারের রক্তের সদস্যরা অনেকেই হয়তো আমার জন্য ঝুঁকি নেবেন কি না জানি না। কিন্তু আমার রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যরা আমার জন্য ঝুঁকি নিয়েছেন।
জমির মূল্য নির্ধারণের প্রক্রিয়া জানাতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, জমির মূল্য নির্ধারণ করেন জেলা প্রশাসক। তার অফিসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। অভিযোগ এসেছে যে, প্রথমে প্রাক্কলনে জমি অধিগ্রহণের জন্য যে মূল্য ধরা হয়েছিল, সেটা ৫৫৩ কোটি টাকা। এরপর দীর্ঘদিন কিছু হয়নি। পরে আবার ১৩ সদস্যের একটি কমিটি করে প্রাক্কলন করে বলা হচ্ছে অধিগ্রহণ করার জন্য যে জমির প্রস্তাব করা হয়েছে সেটির বাজার মূল্য ১৯৩ কোটি টাকা।
মন্ত্রী বলেন, আরেকটি অভিযোগ করা হয়েছে, আমার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কানাডা ভিত্তিক একটি ইন্টারনেট ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বলেছেন, এটা একটি ভাঙনপ্রবণ এলাকা। আমরা বেশ কয়েকটি জমি দেখেছিলাম। কিন্তু তার মধ্যে কয়েকটি বিবেচনায় এই জমিটি আমরা নির্ধারণ করেছি কিছু কারণে। যেমন অন্য জায়গাগুলো ছিলো হাইওয়ের পাশে। হাইওয়ের পাশে হলে যানজটপূর্ণ এলাকা হয়। সে বিবেচনায় এই জায়গাটি আমরা পছন্দ করেছিলাম। এই জমিটির পাশে কিন্তু আমাদের স্থায়ী বাধ রয়েছে। তারপাশে একটি বেড়ি বাধ রয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ও বলেছে এখানে স্থাপনা নির্মাণ করা যেতে পারে। তাহলে কেনো এটাকে অনুউযুক্ত বলা হচ্ছে?
নিজের ক্ষোভ জানাতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যখনই আমি সেখানে কোনো বড় প্রকল্প নিতে যাচ্ছি তখন একটি মহল অপপ্রচার চালাতে থাকেন। এখানে হবে না, ভেঙে যাবে। আমার বা আমার পরিবারের এই অধিগ্রহণ থেকে আর্থিক ভাবে লাভোবান হওয়ার কোথাও কোনো সুযোগ নেই। তাই আমি মনে করি এধরণের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সামনে নির্বাচন। সময়টাকেও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার ভাই একজন চিকিৎসক। উনি সেখানে একটা হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য জমি কিনে রেখেছিলেন। কিন্তু যখনই উনি দেখেছেন সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েল একটা প্রকল্প হতে যাচ্ছে। তাহলেতো আর সেখানে উনি হাসপাতাল বা বৃদ্ধাশ্রম করতে পারবেন না। পরে এই জমি রেজিস্টার দলিলমূলে হস্তান্তর করে দেন।
দীপু মনি বলেন, এখানে দূর্নীতি হয়নি। আমি প্রথমেই বলেছি, ওখানে আমার বা আমার পরিবারের কোনো জমি নেই। সেখানে আমাদের দিক থেকে কোনো দূর্নীতির সুযোগ নেই। ওখানে জাহিদুল ইসলামকে বলা হচ্ছে আমার মামাতো ভাই। কিন্তু আসলে তার সঙ্গে আমার রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আমার রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য।
নিজের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগকে ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটা ষড়যন্ত্র, উদ্দেশ্যপ্রণোদীত। জেলাপ্রশাসন সরকারেরই একটি অংশ। যেহেতু আমি সরকারে আছি, তাই এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার জন্য সমিচীন নয়। আমি মনেকরি, একটি তদন্ত কমিটি করে পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিৎ।
শিক্ষামন্ত্রী অভিযোগ করেন, আমার দলের জেলার যিনি সভাপতি, তিনি একটি ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। যে গণমাধ্যমে তিনি কথা বলেছেন, আমরা সেটি সম্পর্কে ওয়াকিবহল। আসলে গণমাধ্যমটি কোন ধরণের। কোনো অভিযোগ থাকলে তার জন্য দলীয় ফোরাম ছিল। সেখানে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অভিযোগের বিষয়টি জানানো যেতো। কিন্তু সেটা না করে উনারা গণমাধ্যমের কাছে নিয়ে গেছেন। অবশ্য এতে আমার কোনো সমস্যা নেই, লুকোবার কিছু নেই। দলীয় ফোরামে জিজ্ঞাস করা হলে যা বলতাম, গণমাধ্যমেও সেটাই বলবো।
আপনি চাঁদপুরের এমপি। চাঁদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছেন। যে মন্ত্রণালয় এই উন্নয়ন কাজ করবে, আপনি তার মন্ত্রী। এখন জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে অভিযোগ উঠেছে। বলা হয়েছে, জমি না দিলে জোর করে নিয়ে নেয়া হবে- এসব নিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনি কি কিছুই জানেন না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমার পাশের এলাকাতেও জমি নিয়ে বিরোধ চলে। আমাদের ওখানেও হচ্ছে বলে আমি শুনেছি। তবে সেটা এ সংক্রান্তে, তা আমার জানা নেই।
দুই বার প্রাক্কলন হলো, সেটা কি একই জেলাপ্রশাসকের সময়ে হলো নাকি আলাদা জেলা প্রশাসকের? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটা আমার জানামতে ভিন্ন জেলাপ্রশাসের সময়ে হয়নি, একই জেলাপ্রশাসকের সময় হয়েছে।
এরআগে, বৃহস্পতিবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে শিক্ষামন্ত্রী ঘনিষ্টজনদের বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহণে আর্থিক অনিয়োগের অভিযোগ তোলা হয়। বলা হয়, সরকারের কাছ থেকে ৩৫৯ কোটি টাকা বাড়তি নেওয়ার এ কারসাজিতে জড়িত ব্যক্তিরা শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। এর মধ্যে তার নিকটাত্মীয়ও রয়েছেন। তারা ভূমি অধিগ্রহণে প্রশাসনিক অনুমোদনের আগেই চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে জায়গা ঠিক করে নিজেদের নামে দলিল করিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে সেসব জমিই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন করে এবং জেলা প্রশাসনকে অধিগ্রহণের জন্য বলে।
এনএইচ/