কলাবাগানে ১৬ একর জমি অবমুক্ত করছে সরকার
রাজধানীর কলাবাগান এলাকার অধিগ্রহণকৃত ও অধিগ্রহণের জন্য নির্দেশিত কিন্তু ব্যক্তির নামে রেকর্ডকৃত কিংবা দখলে থাকা প্রায় ১৬ একর জমি পূর্বের মালিকের অনুকূলে অবমুক্ত করে দিচ্ছে সরকার। এছাড়া আরও ২ দশমিক ৮ হাজার ৬৫৪ একর জমির মধ্যে যেসব জমি বর্তমানে ব্যক্তির দখলে আছে সেসব জমিও অবমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছে সরকার।
এসব জমি অবমুক্তের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ধানমন্ডি মৌজার অধিগ্রহণকৃত জমির জটিলতা নিরসনে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই নির্দেশনা দেন ভূমিমন্ত্রী। এসময় ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ, অতিরিক্ত সচিব (অধিগ্রহণ) মুহাম্মদ সালেহউদ্দীন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (ভূমি রেকর্ড) মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শওকত হোসেন, ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম সহ ভূমি মন্ত্রণালয় ও এবং গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, জনস্বার্থ বিবেচনায় ইতোপূর্বে খাসমহাল সংক্রান্ত জটিলতা যা দীর্ঘদিন যাবত অনিষ্পন্ন ছিল তা আজ নিষ্পন্ন করা হয়েছে। ভূমি অবমুক্ত প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয় এবং টাউট ও দালালরা যেন কোনও ধরণের হয়রানি না করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ ভূমিমন্ত্রী।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আইনি জটিলতা থাকায় এসব জমির মালিকগণ কিংবা তাদের ওয়ারিশগণ ৭০ বছর যাবত জমির খাজনা খারিজ বা হস্তান্তর করতে পারছেন না। এ কারণে তারা তাদের ভূ-সম্পদের আনুষ্ঠানিক কিংবা অর্থনৈতিকভাবে ফলপ্রসু ব্যবহারও করতে পারছিলেন না। অবমুক্তের ফলে তাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮-৪৯ সালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন নির্মাণের জন্য সরকারের গণপূর্ত বিভাগ (তৎকালীন সিএন্ডবি) এর অনুকূলে রাজধানীর ধানমন্ডিসহ ৮টি মৌজায় মোট ৪৭২ দশমিক ৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালের ৮ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করে অধিগ্রহণ চূড়ান্ত হয় এবং জমির দখল হস্তান্তরিত হয়।
কিন্তু প্রত্যাশী সংস্থা ধানমন্ডি মৌজার সিএস ৬৭ নম্বর দাগের অধিগ্রহণকৃত ১৬ দশমিক ৮৭ একর জমির মধ্যে ১৬ দশমিক শূন্য ৬ একর জমিতে কোনও সময়ে দখলে যায়নি। দীর্ঘদিন যাবত জমির পূর্ব মালিকরা ওয়ারিশ বা অন্যান্যসূত্রে এই জমিতে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে ভোগ দখলে আছেন। ১৯৬৮ সনে সরকার ভূমি মালিকদের উচ্ছেদ নোটিশ করলে ভূমি মালিকরা সরকারের উচ্ছেদ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের শরনাপন্ন হন। আদালত তাদের পক্ষে রায় দেয়।
১৪ দশমিক ০০৪৬ একর জমি সিএস, এসএ, আরএস এবং মহানগর জরিপে ব্যক্তির নামে এবং ২ দশমিক ৮ হাজার ৬৫৪ এর জমি সিটি জরিপে গণপূর্ত বিভাগের নামে রেকর্ড হয়। তবে এই জমির মধ্যে কিছু অংশ ব্যক্তির দখলে এবং কিছু অংশ গণপূর্ত বিভাগের দখলে আছে। এই জন্য বিগত ৭০ বছর যাবত জমির মালিকরা এই জমির খাজনা খারিজ বা হস্তান্তর করতে পারছেন না।
এক পর্যায়ে জমির মালিকরা জটিলতা নিরসনে ২০১৮ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপিত হয়। মন্ত্রিপরিষদ ভূমি মন্ত্রণালয়কে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের সঙ্গে আলোচনাক্রমে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এই জমির জটিলতা নিরসনে গতবছরের ১ মার্চ চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে ভূমি মন্ত্রণালয়।
বুধবারের (২৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় কমিটির প্রতিবেদনসহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য সংস্থার মতামত পর্যালোচনা করে ভূমিমন্ত্রী ব্যক্তির নামে রেকর্ডকৃত ও দখলে থাকা উপরোক্ত ১৪ দশমিক ০০৪৬ একর জমি পূর্বতন মালিকের অনুকূলে অবমুক্ত করা সিদ্ধান্ত দেন।
এছাড়া সিটি জরিপে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ডকৃত ২ দশমিক ৮ হাজার ৬৫৪ একর জমির মধ্যে গণপূর্ত বিভাগের দখলে থাকা অংশ ব্যতীত অবশিষ্ট জমি অবমুক্ত করারও নির্দেশ দেন ভূমিমন্ত্রী।
এনবি/