পাহাড়ে নিউমোনিয়ায় ১৫ শিশুর মৃত্যুতে ২৩ বিশিষ্ট নাগরিকের বিৃবতি
গত ২ সপ্তাহে দেশের পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় গভীর হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ২৩ বিশিষ্ট নাগরিক।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে সংক্ষুব্ধ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শিশু মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, পার্বত্য চট্রগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যাদের বয়স ১ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে। এ ধরনের শিশু মৃত্যুর ঘটনা মোটেই স্বাভাবিক নয়। এমন ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে হতাশ করেছে, আমরা উদ্বিগ্ন।
কিন্তু কত সংখ্যক শিশুর মৃত্যু হলে রাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হবে নড়ে চড়ে বসবে? শিশু মৃত্যুর ঘটনা থেকে প্রমাণ হয় ওই পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষ মানুষের আকৃতিতে, খোলসে বেড়ে ওঠে মাত্র, তা না হলে কি করে ১৫ শিশুর মৃত্যুর পরও রাষ্ট্রযন্ত্র নিরুত্তাপ পড়ে থাকে! পাহাড়ে উন্নয়নের নামে অনেক প্রকল্প হয়েছে। কিন্তু এ সকল প্রকল্প কিছু মানুষের অবসর যাপনের কেন্দ্র।
এতগুলো শিশুর মৃত্যুতে আমরা একটি ফাঁপা রাষ্ট্র কাঠামোকে দেখতে পাই। ফলে পাহাড় আর সমতলের মধ্যকার বৈষম্যের সম্প্রসারণ বুঝতে পারি। অথচ কথা ছিলো ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের কোথাও কোনো বৈষম্য থাকবে না; মুক্তিযুদ্ধে সুবর্ণজয়ন্তীরকালে এই বৈষম্যের মাত্রা শুধুই প্রকট হয়েছে। চাইলেই বৈষম্য মুক্তির স্বাদ মিলবে না। রাজনীতি, অর্থনীতির সবটাই এই বৈষম্য তৈরির কারিগর।
আমরা জেনেছি, শুধুমাত্র সেবা উপকরণের অপ্রতুলতাই নয়, সেবাদানকারীদের অবহেলাও এতগুলো প্রাণ ঝরে পড়ার জন্য দায়ী। গত দুই সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণকালে আমরা স্বাস্থ্যখাতের যে নগ্নতা দেখেছি, তাতে এখানে আর এমন কোনো রাখঢাকের বিষয় নেই।
নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তানুসন্ধান প্রয়োজন। কেননা এতগুলো মৃত্যুর পেছনের কারণ জানা দরকার। শুধুমাত্র আর্থিক অসঙ্গতির কারণে উন্নত সেবা নিতে না পারায় শিশুদের মৃত্যু ঘটেছে, এটি বিশ্বাস করার মতো নয়। তা ছাড়া নিউমোনিয়ার প্রকোপ যখন এই বয়সের শিশুদের মাঝে খুবই বেশি এবং প্রচলিত স্বাস্থ্যসেবায় এই রোগমুক্তির ব্যবস্থাও বিদ্যমান তখন এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আমরা ভাবছি সে সকল পিতা-মাতার কথা, যারা তাদের সন্তান হারিয়েছেন। তাদের প্রতি আমাদের সমানুভূতি প্রকাশ করছি।
আমাদের দাবি-১. অবিলম্বে শিশুর মৃত্যুর পেছনে কি কি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে; ২. হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত উপকরণ ছিলো কিনা এবং না থাকলে কেন ছিল না এবং ৩. সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে ঘটনার তদন্ত করতে হবে।
বিবৃতি প্রদানকারীরা হলেন- পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ, অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা,রামেন্দু মজুমদার, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, ডা. সারওয়ার আলী, ট্রাস্টি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সভাপতি, মহিলা পরিষদ, ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, সদস্য সচিব, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ,এস.এম.এ সবুর, সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, খুশী কবির, মানবাধিকার কর্মী, রোকেয়া কবির, উন্নয়ন কর্মী, এম. এম. আকাশ, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,ডা. লেনিন চৌধুরী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ,সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, অ্যাডভোকেট পারভেজ হাসেম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট,আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব), আবদুল ওয়াহেদ, কার্যকরী সভাপতি, জাতীয় শ্রমিক জোট,অ্যাডভোকেট জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংগঠক, গণজাগরণ মঞ্চ,ড. সেলু বাসিত, সংস্কৃতি কর্মী,এ কে আজাদ, সংস্কৃতি কর্মী,অলক দাস গুপ্ত,সভাপতি, উঠোন সাংস্কৃতিক সংগঠন,দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম,কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল, সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ও গৌতম শীল, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল)।
এনএইচবি/এমএমএ/