জনগণের সেবা সহজ করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির
জনগণকে দ্রুততম সময়ে পুলিশি সেবা প্রদান পুলিশের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। জনগণের সেবা প্রাপ্তি সহজীকরণে পুলিশ কর্মকর্তাদের আরও তৎপর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
পুলিশ সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং এবং বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, তাদের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশকে জনবান্ধব পুলিশ ও মানবিক পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকতে হবে।
পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বাড়িয়ে এগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বমানের পর্যায়ে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন বিদেশি পুলিশ কর্মকর্তারাও বাংলাদেশে এসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে আগ্রহী হন।
তিনি বলেন, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গবেষণা, উদ্ভাবন এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আত্তীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশকে সমৃদ্ধ হতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, এজন্য বাংলাদেশ পুলিশে একটি থিংক ট্যাঙ্ক থাকা প্রয়োজন। এ থিংক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল কার্যক্রম ও তদন্তে বৈজ্ঞানিক কৌশলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি তথা নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন, প্রশিক্ষণসহ সার্বিক কার্যক্রমে উৎকর্ষ সাধনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, বিকাশমান প্রযুক্তির বর্তমান বিশ্বে অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি সাইবার অপরাধ অতি দ্রুত বাড়ছে। সাইবার অপরাধীরা দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এবং বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে এ ধরনের অপরাধ করছে, যা দমন করা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
জঙ্গি দমন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, জঙ্গি দমন বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম প্রধান সাফল্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
মাদককে একটি বড় সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আখ্যায়িত করে আবদুল হামিদ বলেন, দেশের তরুণ সমাজের একটি অংশ মাদক সংক্রান্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মচারীরাও এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, যা খুবই অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। যুব সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। পুলিশকে এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নিয়ে আরও বেশি সক্রিয় ও তৎপর হতে হবে। প্রয়োজনে শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯, অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, অনলাইন জিডি, ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন ইত্যাদি সেবা জনগণ দ্রুত পাচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষও তাদের জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ এ কল করে দ্রুততম সময়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাচ্ছেন। ৯৯৯ সার্ভিসের উন্নয়নে এর কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করা ও উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনার প্রয়োগ খুবই জরুরি।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষ বিপদে পড়েই আইনি সেবা পেতে পুলিশের কাছে আসে। আপনারা এসব বিপদাপন্ন মানুষের সমস্যা ও অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। তাদেরকে আন্তরিকতার সাথে আইনি সেবা দিতে কখনো কুণ্ঠাবোধ করবেন না।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সেবা প্রার্থীরা যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখবেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন-'তোমরা জনগণের পুলিশ'। আপনারা প্রকৃত অর্থে জনগণের পুলিশ হওয়ার লক্ষ্যে 'বন্ধু' হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়াবেন, মানবিক পুলিশ হবেন। জনগণকে সেবা প্রদান এবং তাদের আস্থা অর্জনের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন।
করোনা মহামারিতে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে জনগণের পাশে থেকে সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় পুলিশ সদস্যদের প্রশংসা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবরা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ এবং ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এনএইচ/এসআইএইচ