গোলটেবিল বৈঠকে নারী নেত্রীরা
নির্যাতন দূর করতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে
নারীর প্রতি নির্যাতন ও বৈষম্য দূর করার জন্য উত্তরাধিকারে নারীর সমতা নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রীরা।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা বলেছেন, উত্তরাধিকারে ও পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার আইনটি পাশ করা হলে তা হবে মুজিব শতবর্ষে ও স্বাধীনতার ৫০ বছরে নারী সমাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) আয়োজিত ‘বৈষম্য দূর করার জন্য উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার চাই’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপিএস’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর।
আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক অ্যাডভোকেট নিনা গোস্বামী, মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফৌজিয়া মোসলেম, সমকালের সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান শেখ রোকন, অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর এনামুল মজিদ খান সিদ্দিকী, নেটস-এর আফসানা বিনতে আমীন, প্রাগ্রস্বরের নির্বাহী পরিচালক ফৌজিয়া খন্দকার ইভা, ড. মাখদুমা নার্গিস রত্না, ড. হান্নানা বেগম, মানব প্রগতি সংঘের মাহমুদা শেলী, সিড বাংলাদেশের সারথী রাণী সাহা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিএনপিএস’র উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী।
সূচনা বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, সংবিধান রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমানাধিকার দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশের নারী সমাজকে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।
এই বৈষম্যের মূল স্তম্ভ উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকা। যা বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনসহ সমাজ-রাষ্ট্রে চলমান বিভিন্ন উপসর্গের মূল কারণ। এই সংকট মোকাবিলা উত্তরাধিকারসহ সকল সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের বিষয়টি স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় অনুসরণে প্রণীত পারিবারিক আইনটি এখনো কার্যকরী আছে, যা নারীর জন্য বৈষম্য ও নির্যাতনের উৎসে পরিণত হয়েছে। তাই সর্বজনীন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা রাষ্ট্রের জরুরি কর্তব্য।
অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, নারীর আর্থিক ক্ষমতায়নের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষমতায়নের বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নারী আর্থিক ক্ষমতায়ন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ নারী যখন আত্মকর্মসংস্থানে প্রবেশ করছে, তখন একজন ক্ষুদ্র উদ্যক্তা হিসেবেই কাজ করছে। কিন্তু সীমিত সম্পদের কারণে সে তার ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই নারীর সনির্ভরতার জন্য সম্পত্তি প্রাপ্তিতে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ড. ফৌজিয়া মোসলেম বলেন, সব আইন সংবিধানের আলোকে তৈরি ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শুধুমাত্র এই আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে না। অবিলম্বে অভিন্ন ও সার্বজনীন পারিবারিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারীর প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।
বৈঠকে বক্তারা বলেন, উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার শুধু আজকের দাবি না, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যেই নিহিত রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান আমলের মুসলিম পারিবারিক আইনটি স্বাধীন বাংলাদেশেও বলবৎ রয়েছে। যা কোনো ভাবেই গ্রহণযোাগ্য নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে দ্রুত আইনটি সংশোধনের দাবি জানান তারা।
এনএইচবি/এমএমএ/