জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেলেন যারা
জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার বিতরণ। ছবি: সংগৃহীত
জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করলেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা এবং সিআরআই চেয়ারম্যান সজীব ওয়াজেদ জয়। সাভারের শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে আয়োজিত হচ্ছে আসরটি।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) ৬টি ক্যাটাগরিতে তরুণদের ১২টি সংগঠনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এবারের জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী ১২ সংগঠনগুলোকে এক নজর দেখে নেওয়া যাক।
সোস্যাল ইনক্লুশন বা সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ক্যাটাগরিতে দুটি সংগঠন:
উইমেনস ড্রিমার ক্রিকেট অ্যাকাডেমি
অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে ‘উইমেনস ড্রিমার ক্রিকেট একাডেমি’। আরিফা জাহান বিথি জানান, গ্রামে অবহেলিত মেয়েদের নিয়ে এই নারী ক্রিকেট একাডেমির পথচলা। নারী ক্ষমতায়ন, তাদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা এবং বাল্যবিয়ে হ্রাস করা এই ক্রিকেট একাডেমির মূল লক্ষ্য।
স্বপ্ন: এক চিলতে হাসির জন্য
নারী ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার রক্ষা এবং বিশেষ সক্ষমতা সম্পন্ন শিশুদের মূল সমাজে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার লড়াইয়ে ২০১৪ সাল থেকে নোয়াখালীতে কাজ করে যাচ্ছে ‘স্বপ্ন : এক চিলতে হাসির জন্য’ সংগঠনটি। মাইনুল হাসান শিমুল জানান, এই সংগঠনটি বর্তমানে নোয়াখালী ছাড়িয়ে চট্টগ্রামেও তাদের কার্যক্রম পরিচালনার কথা ভাবছে। বর্তমানে সংগঠনটির ৭৬ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছেন।
দক্ষতা ও কর্মসংস্থান ক্যাটাগরিতে দুটি সংগঠন:
ঋতু হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন
উম্মে শারমিন কবির পরিচালিত ‘ঋতু হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন’ নারীদের জন্য পরিচালিত একটি সংগঠন যার মূল লক্ষ্য নারী ক্ষমতায়ন। আর এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি নারী নিরাপত্তা, নারীর কর্মক্ষেত্রে ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি, কিশোরদের নিজেদের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি এবং সন্তানদের লালন-পালনবিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ ও সেবা প্রদান করে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও সেমিনারও করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
এফএপিএ বাংলাদেশ
এফএপিএ বাংলাদেশ নারী ক্ষমতায়নের জন্য তার কর্মক্ষেত্রের সুযোগ তৈরি করে। এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে নারীদের, বিশেষত যেসব নারী সন্তান নিয়ে একা বসবাস করছেন এবং আর্থিক সমস্যায় থাকেন এমন নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে বলে জানান ইঞ্জিনিয়ার শিব্বির আহমেদ। এ ছাড়াও শ্রম আইন এবং গার্মেন্টস সেক্টরে চাকরিতে প্রবেশের পূর্বে নারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে সচেতন করে তোলে এই সংগঠন।
উদ্ভাবন ও যোগাযোগ ক্যাটাগরিতে দুটি সংগঠন:
ক্লিয়ার কনসেপ্ট
মো. হিরোক শেখের ‘ক্লিয়ার কনসেপ্ট’ দেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের ২৫০ জনের বেশি সক্রিয় সদস্যকে নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এটি একটি স্বাস্থ্য প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম।
টিম অ্যাটলাস
উদ্ভাবন ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে সানি জুবায়েরের ‘টিম অ্যাটলাস’ ২০১৬ সাল থেকে কাজ করছে এবং তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জন রোবটিক্স এবং স্পেস এক্সপ্লোরেশনে যেখানে বিশ্ব রোবটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে গোল্ড মেডেল জয় করে তারা। ৮০ জন সক্রিয় সদস্যসহ ১২০ জনকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে টিম অ্যাটলাস। দেশের ২১টি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তাদের সংগঠনের সদস্যরা।
সমাজের উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে দুটি সংগঠন:
নুপম ফাউন্ডেশন
সমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে মো. রেজাউল করিম এর ‘নুপম ফাউন্ডেশন’। সংগঠনটি রক্তদান কর্মসূচি, সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি, পথ নাটক এবং বই মেলা আয়োজন সহ আরও বেশ কিছু সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
আলট্রাস্টিক পিউপিলস ইয়ুথ অর্গানাইজেশন (এপিওয়াইও)
রাঙামাটির পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করছেন মালাচিং মারমার ‘আলট্রাস্টিক পিউপিলস ইয়ুথ অর্গানাইজেশন’ (এপিওয়াইও)। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর স্বাস্থ্য সেবা প্রদান এবং ম্রো জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে এই সংগঠনটি। এ ছাড়া এই সংগঠন বর্তমানে ৪ হাজারের বেশি তরুণ এবং ১৭০ জনের বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে চট্টগ্রামেও নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করছে সংগঠনটি।
জলবায়ু ও পরিবেশ সুরক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টি ক্যাটাগরিতে- ২টি সংগঠন:
ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ (ডব্লিউএসআরটিবিডি)
দেশের ৪০টি উপজেলায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিষয়ক সচেতনতা তৈরি ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষার জন্য কাজ করছে ‘ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ’ (ডব্লিউএসআরটিবিডি)। মো. শহিদুল ইসলাম জানান, সাপ উদ্ধার থেকে শুরু করে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিষয়ক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করে সংগঠনটি।
ইকো-নেটওয়ার্ক গ্লোবাল
জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে ‘ইকো-নেটওয়ার্ক গ্লোবাল’। শামীম আহমেদ মৃধা পরিচালিত এই সংগঠনটি নেটওয়ার্কিং ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রায় ১৫০০ জনের বেশি স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে চলা এই সংগঠনের মাধ্যমে সুবিধা লাভ করেছে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।
শিল্প ও সংস্কৃতি ক্যাটাগরিতে- ২টি সংগঠন:
অভিনন্দন ফাউন্ডেশন
এক সময় দেশের মঙ্গা অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রংপুরের চিত্র অনেকটা পাল্টে গেলেও এখনও অর্থনৈতিকভাবে এই অঞ্চলটি পিছিয়ে। আর এ কারণেই ২০১৭ সালের রংপুর অঞ্চলের মানুষের কর্ম সংস্থান এবং হতদরিদ্রদের সহায়তায় কাঞ্চন চন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘অভিনন্দন ফাউন্ডেশন’। বর্তমানে এই সংগঠনটির ১০০জনের বেশি সক্রিয় সদস্য রয়েছে যাদের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ সেবা পাচ্ছে।
টঙ্গের গান
দেশের শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে উজ্জীবিত রাখতে মো. মাহমুদুল হাসান আবির মিয়া গড়ে তোলেন ‘টঙ্গের গান’। মানুষকে দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে এক বন্ধনে আবদ্ধ করতে এবং শিশু শিক্ষা, নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা, বাল্যবিয়ে, স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টসহ সামাজিক সচেতনতামূলক আরও বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে টঙ্গের গান। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজন ‘সম্প্রীতি সন্ধ্যা’য় নিয়মিত ২ হাজারের বেশি দর্শক উপস্থিত হয়। এখন পর্যন্ত এই সংগঠনের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতির স্বাদ অন্বেষণ করেছেন সরাসরি ১ লাখের বেশি মানুষ।