বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অবস্থান স্পষ্ট করলো ভারত
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে। শুক্রবার ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ভিনয় কোয়াত্রা।
তিনি বলেছেন, একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সেদেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে। তিনি এটাও বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সেদেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পরে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিবৃতি দেয়নি। নিজেদের অবস্থান ‘খুবই স্পষ্ট করে’ যুক্তরাষ্ট্রের সামনে তুলে ধরার বিষয়টিকে বিশ্লেষকরা ব্যাখ্যা করছেন যে- আমেরিকা যাতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বেশি চাপ না দেয়, সেই বার্তাই শুক্রবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছে ভারত।
‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি’ ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পরে শুক্রবার বিকেলে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সেখানেই এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা মন্তব্য করেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি আমরা। তৃতীয় কোনো দেশের নীতিমালা নিয়ে আমাদের মন্তব্য করার জায়গা নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেদেশের মানুষ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
‘এক বন্ধু এবং সঙ্গী দেশ হিসাবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান জানাই আমরা। একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সেদেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত কঠোরভাবে সমর্থন করে, বলছিলেন কোয়াত্রা।
তিনি একটু জোর দিয়েই বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি, আমরা যেভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করি, সেটা খুব স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের এই অবস্থান নতুন নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যেভাবে নানা মন্তব্য করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা, তার বিপরীতে গিয়ে ‘তাদের’ দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে মার্কিন সচিবদের সামনে তুলে ধরার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পরে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যুক্তরাষ্টের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি বা সংবাদ সম্মেলন করা হয়নি।
‘ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার দরকার ছিল’
বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের নানা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শুক্রবারের বৈঠকে ভারত তাদের অবস্থান যে স্পষ্ট করে দিয়েছে, সেটাকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমন কল্যাণ লাহিড়ী বলছেন, ‘ভারতের অবস্থান স্পষ্টই ছিল, কিন্তু সেটা ‘খুব স্পষ্ট’ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিবের সামনে তুলে ধরাটা খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে আমাদের।’
তার কথায়, ‘ভারতের পক্ষে বাংলাদেশে একটা স্থিতিশীল সরকার থাকা খুবই জরুরি আমাদের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের কারণে। সেদেশের ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে শেখ হাসিনার সরকারের ওপরে নানাভাবে চাপ বাড়াচ্ছে, সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও তারা যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে, সেগুলো তো ঘটনা। তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যাতে তারা বেশি মাথা না ঘামায়, সেটা ভারত স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। যদিও যৌথ বিবৃতি জারি করা হলে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানটা জানা যেত।’
ভারত কেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বন্দ্বে যাচ্ছে?
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছে। প্রতিবছর টু প্লাস টু বৈঠক যেমন করছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা, তেমনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আর নরেন্দ্র মোদির মাঝে-মধ্যেই সাক্ষাত হয়।
এরকম একটা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কেন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়বে ভারত?
পররাষ্ট্র সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ শশাঙ্ক মাট্টু তার এক্স (আগেকার টুইটার) হ্যাণ্ডেলে পর পর বেশ কয়েকটি পোস্ট করেছেন বাংলাদেশ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রর ভূমিকা ও ভারতের অবস্থান নিয়ে।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ভারত কেন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দ্বন্দ্বে যাচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের মাথা গলানোর কারণে ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হুমকির মুখে পড়ছে।’
প্রথম এই পোস্টের সাথে ভারত আর বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর একটা ছবি দিয়েছেন মাট্টু।
এর পরবর্তী পোস্টগুলিতে মাট্টু ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘ওয়াশিংটন প্রকাশ্যেই হাসিনা সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন করার আহ্বান জানিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাসিনা সরকার আর আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে মানবাধিকার ইস্যুতে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমেরিকার অবস্থান একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে।’
তিনি এও বলেছেন যে- ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শরিক হলেন শেখ হাসিনা। তিনি যদি নির্বাচনে পরাজিত হন, তাহলে প্রতিবেশীদের নিয়ে ভারতের নীতিমালাতেও সমস্যা হবে।
শুক্রবারের বৈঠকে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে যেমন আলোচনা হয়েছে, তেমনই কথা হয়েছে ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ নিয়েও, এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
আবার প্রতিরক্ষা খাতেও দুই দেশের সহযোগিতা, যৌথ উৎপাদন নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি