দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২১
বিশ্বের ১৩তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বাংলাদেশ
বিশ্ব দুর্নীতি সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭তম। নিচের দিক থেকে ১৩তম দুর্নীতির দেশ বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে বাংলাদেশ। শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২১’ এর বৈশ্বিক প্রকাশ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
মোট ১৮০টি দেশের উপর জরিপ করা হয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। দেশগুলো পেয়েছে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৮। বাংলাদেশ পেয়েছে ২৬। মাদাগাস্কার ও মোজাম্বিকও ২৬ পেয়ে একই অবস্থানে রয়েছে। গত ৪ বছর ধরেই বাংলাদেশের স্কোর ২৬। তবে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৩। গতবার ছিল ১২।
এ ছাড়া গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে নিচ থেকে দ্বিতীয়তে অবস্থান করছে। অর্থাৎ গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, এই যে ১২ থেকে ১৩ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ, এর অর্থ কিন্তু এটা নয় যে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে। এর অর্থ হলো অন্য দেশ খারাপ করেছে তাই বাংলাদেশ একধাপ এগিয়েছে।
দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, সোমালিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইয়েমেন, উত্তর কোরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইকোয়েটরিয়াল গিনি, তুর্কমেনিস্তান, ডি আর কঙ্গো এবং বুরুন্ডি এই ১২টি দেশ হলো সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।
সবচেয়ে কম দুর্নীতির ১২টি দেশ হলো–ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডে, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবার্গ, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং হংকং।
দক্ষিণ এশিয়ায় কার কী অবস্থান
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ভুটান। দেশটি ১০০ এর মধ্যে পেয়েছে ৬৮। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ভুটান। বিশ্বে ভুটানের অবস্থান ২৫তম।
দ্বিতীয় কম দুর্নীতির দেশ ভারত ও মালদ্বীপ। দেশ দুটি ১০০ এর মধ্যে পেয়েছে ৪০। বিশ্বে তাদের অবস্থান ৮৫তম।
দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ শ্রীলঙ্কা। ১০০ এর মধ্যে দেশটি পেয়েছে ৩৭। বিশ্বে এর অবস্থান ১০২তম।
এর পর আছে নেপাল। ৩৩ পেয়ে ১৮০ দেশের মধ্যে তাদের অবস্থান ১১৭তম।
এর পরের অবস্থানে আছে পাকিস্তান। দেশটি ১০০ এর মধ্যে পেয়েছে ২৮। ১৮০ দেশের মধ্যে ১৪০তম স্থানে আছে দেশটি।
দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের পরের অবস্থান আর আফগানিস্তানের আগে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ১০০-তে পেয়েছে ২৬। ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৭তম অবস্থানে রয়েছে।
অন্যদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান পেয়েছে ১৬। এতে দেশটি ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৪তম স্থান অধিকার করেছে।
বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে যা বললেন ইফতেখারুজ্জামান
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অবস্থা খুবই হতাশাজনক। আদতে ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ দুর্নীতি সূচকে উন্নতি করতে পারছে না।’
দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ব্যর্থ অভিহিত করে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দুদক শুধু চুনোপুঁটি ধরছে। রাঘব-বোয়ালদের ধরতে পারছে না।’
এ ছাড়া দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘কথা বলতে গেলেই মিডিয়া ও সাধারণ মানুষকে হামলা-মামলা দেওয়া হয়েছে। তাই জনগণের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করার বিষয়টি সংকুচিত হয়েছে। এই অবস্থা ফেরাতে হবে।’
দুর্নীতির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স বাস্তবায়িত হচ্ছে না উল্লেখ করে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দলীয় প্রশাসনের জায়গা থেকে সরে আসতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা দরকার। সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে নাগরিক সমাজ ও মিডিয়া যাতে রোল প্লে করতে পারে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’
আরইউ/এসএ/