আজ কবিগুরুর ১৬২তম জন্মজয়ন্তী
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কালজয়ী এ কবি ও সাহিত্যিক।
কোনো বিশেষণেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তুলে আনা সম্ভব নয়। তিনি ছিলেন একাধারে অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে ‘গুরুদেব’, ‘কবিগুরু’ ও ‘বিশ্বকবি’ অভিধায় ভূষিত করা হয়।
শৈশব-কৈশোর থেকেই লেখালেখিতে তার খড়ি হয়। পারিবারিক পরিমণ্ডলে সাহিত্য, সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বেড়ে ওঠা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেননি। গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ৮ বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় তার ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা।
১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। এর চার বছর পর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।
১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির। সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর সেরে উঠতে পারেননি। এই সময়পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলো ছিল মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে। মৃত্যুর সাত দিন আগ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
‘আজি হতে শতর্বষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/শত কৌতুহল ভরে/ . . . আজি হতে শতর্বষ পরে/ এখন করিছো গান সে কোন নুতন কবি/ তোমাদের ঘরে!’
শুধু শতবর্ষ নয়, কত শতবর্ষ পরও যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাসঙ্গিক থাকবেন, তা তার রচিত সাহিত্যের দিকে মনোনিবেশ করলে বোঝা যায় কবির এ জিজ্ঞাসা কত বড় সত্য। বছরের পর বছর ধরে স্মরণীয়, পুজনীয় কবিগুরু। কবির জন্মদিনে বিবিণ্ন দেশের বাঙালিদের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে ভক্ত, অনুরাগী ও বিভিন্ন সংগঠন। এবার জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-‘সমাজ সংস্কার ও রবীন্দ্রনাথ।’
রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ ও ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গান দুটি যথাক্রমে ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। মনে করা হয়, শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত ‘শ্রীলঙ্কা মাতা’ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা।
বিশ্বকবির ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তার সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিনিধি। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি নির্দেশকের ভূমিকা রেখেছেন। তিনি আমাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীত স্রষ্টা। চিত্রকর, সমাজচিন্তক এবং মানবতাবাদী দার্শনিক হিসেবেও রয়েছে তার বিশ্বখ্যাতি।’
রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবার রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসরে।
এ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহ্জাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবির জন্মদিন পালন করা হবে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমিও আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান রবীন্দ্রনাথ। তার নোবেল বিজয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে এনে দেয় গৌরবের মুকুট। এশিয়া মহাদেশে সাহিত্যে নোবেল পাওয়া তিনিই প্রথম লেখক।
এসএন