১৭ কোটির নিচেই থাকল দেশের জনসংখ্যা
জনশুমারি ২০২২-এ শেষ পর্যন্ত ১৭ কোটির নিচেই থাকল দেশের জনসংখ্যা। চূড়ান্ত হিসেবে সমন্বয় করে দেশের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। যা প্রথমে গণনায় ছিল ১৬ কোটি ৫২ লাখ।
এ জনশুমারিতে শহরের জনসংখ্যা হচ্ছে ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং গ্রামে বসবাস করছে ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
রবিবার (৯ এপ্রিল) পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিবিএসের সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব ড. শাহনাজ আরেফিনসহ অন্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ২০২২ সালের জুনে ৬ষ্ঠ জনশুনারি শুরু হয়। এতে প্রবাসীদেরও গণনা করা হয়েছে।
গত বছরের ২৭ জুলাই এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এখনই প্রবাসীদের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প মেয়াদের মধ্যে তা জানানো হবে।
অন্যান্য শুমারিতে প্রথম গৃহগণনায় জনশুমারির সঙ্গে (তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে গণনা) সমন্বয়ের পার্থক্য অনেক বেশি হলেও ২০২২ সালে কম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে (সমন্বয়) পার্থক্য ৫ শতাংশ ধরা হয়। এর আগের শুমারিতে আমাদের পার্থক্য তিন শতাংশের উপরে ছিল। কিন্তু এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে শুমারির কাজ করা হয়েছে। আবার তৃতীয় পক্ষের গণনার (বিআইডিএস) ভিত্তিতেই চূড়ান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। তারা ৩৭৮টি নমুনা গণনা এলাকায় ৩৯ হাজার খানায় জরিপ করে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ৪৭ লাখ মানুষের ব্যবধান পেয়েছে। তাতে চূড়ান্ত হিসেবে মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৯ হাজার। কারণ প্রথমে জনশুমারির গণনাতে এটা ছিল ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৮ হাজার।
এটা সব দিক থেকে সঠিকভাবে করার চেষ্টা করা হয়েছে। চার লাখ ট্যাব দিয়ে এই সার্ভে করা হয়েছে। দুই লাখ ট্যাবে বিবিএসের অন্যান্য সার্ভে করা হবে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এর মেয়াদ রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন বলেন, অনান্য শুমারির মতোই ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনায়-২০২২ এ সমন্বয় রিপোর্ট প্রথমে গত ৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ২০২২ সালের জনশুমারিতে পুরুষের চেয়ে মহিলায় বেশি। মোট মহিলা হচ্ছে ৫০ দশমিক ৪৩ শতাংশ ও পুরুষ হচ্ছে ৪৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে হিজড়া বাস করছে ১২ হাজার ৬২৯ জন। ১৫ থেকে ১৯ বছরের জনসংখ্যা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ১ কোটি ৬৬ হাজার বা ১০ দশমিক ১০ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম হচ্ছে ৭৫ বছরের বেশি জনসংখ্যা প্রায় ৮৬ হাজার জন বা দশমিক ০৫ শতাংশ।
দিলদার হোসেন আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা বাস করছে ঢাকা শহরে ৪ কোটি ৫৬ লাখ বা ২৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ, এরপরই চট্রগ্রামে ৩ কোটি ৪২ লাখ বা ২০ দশমিক ১৩ শতাংশ, জনসংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রাজশাহীতে বাস করছে ২ কোটি ০৮ লাখ বা ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ লোক বাস করছে। তবে সবচেয়ে কম জনসংখ্যা বাস করছে বরিশালে ৯৩ লাখ ২৫ হাজার বা ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ বলে জানানো হয়েছে।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, এবারের শুমারিতে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ১৫ থেকে ৪০ বছরের বেশি বয়সের সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করছে দেশে। এদিকে মনোযোগ দিলে উন্নত বাংলাদেশ গড়া খুবই সহজ হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অত্যন্ত সঠিকভাবে ও সুদ্ধভাবে এ শুমারিতে সব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুমারি সঠিকভাবে করতে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করা হয়েছে। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় শহর ও গ্রামের পার্থক্য কমে আসছে। তথ্য উপাত্ত নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলেও আমরা আমাদের তথ্য দিয়েই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছি। কাজেই যে যাই বলুক বিবিএসের তথ্য নিয়ে বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ অন্যরা বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট প্রকাশ করে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, যুক্তরাষ্টের মতো উন্নত দেশেও মরা মানুষের জন্য ভাতা দেওয়া হয়েছে। সঠিকভাবে সব কিছু তথ্য তুলে ধরা কঠিন কাজ। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। কোনো তথ্য গোপন করা সরকারের সিদ্ধান্ত নয়। প্রবাসীদের তথ্য এই প্রকল্পের সময়ের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে।
জেডএ/এমএমএ/