ডিসি সম্মেলন
জনগণের টাকায় আমাদের সংসার চলে: রাষ্ট্রপতি
সরকারি কর্মকর্তাদের ‘জনগণের সেবক’ বলে অভিহিত করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘সেবা পাওয়াটা দয়া-দাক্ষিণ্য বা বদান্যতার বিষয় নয়, সেবা পাওয়াটা জনগণের অধিকার। আমরা-আপনারা জনগণের সেবক। তাই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। মনে রাখতে হবে, জনগণের টাকায় আমাদের সংসার চলে।’
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিনে মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল বলেই আজ আমি রাষ্ট্রপতি, আপনারা সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক হয়েছেন। একবার ভেবে দেখুন তো দেশ স্বাধীন না হলে আমরা কে কী হতে পারতাম? তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিবেন।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন ।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
অন্যান্য বছর জেলা প্রশাসকরা বঙ্গভবনে গিয়ে দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন; কিন্তু কোভিড-১৯ জনিত কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার বঙ্গভবনের প্রোগ্রাম বাতিল করা হয়। রাষ্ট্রপতি ভার্চুয়ালি যুক্ত হোন।
ডিসিদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিটি স্তরে দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। দায়িত্ব সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। কিন্তু ক্ষমতার যাতে অপপ্রয়োগ না হয় তা নিশ্চিত করা আরও বেশি জরুরি। তাই কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রকৃত দরিদ্ররা যাতে সুফল পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ভূমি ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ডিসিদের বলেন, ‘ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমি সংক্রান্ত জনবান্ধব সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। কিন্তু ভূমি রেকর্ডের সময় এক শ্রেণীর অসাধু কর্মচারী স্থানীয় প্রভাবশালী দালালচক্রের সহযোগিতায় অনেক অনিয়ম করছে এবং অবৈধ সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে জনভোগান্তি বেড়েছে। তাই এসব ব্যাপারে আপনাদের কঠোর হতে হবে এবং যে কোনো অনিয়ম বন্ধ করতে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘জেলা ও উপজেলা সদরে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সামনে জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব দেখার কেউ নেই। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বন, নদী ও পাহাড় রক্ষা করতে কঠোর হতে হবে। এটা করতে পারলেই উন্নয়ন সুষম ও জনমুখী হবে।’
রাষ্ট্রপতি প্রশাসনের সব স্তরে জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। দুর্নীতির কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’
এনএইচবি/এসএ/