তিস্তার পানি নিয়ে আবারও হতাশা
তিস্তার পানি নিয়ে আবারও হতাশা দেখা দিয়েছে। একদিকে দশকের পর দশক ধরে তিস্তা চুক্তি না হওয়া অন্যদিকে সম্প্রতি ভারতেরই মিডিয়ায় প্রকাশিত তিস্তা পাড়ে দুটি খাল খনন ও তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প করার সংবাদ প্রকাশিত হওয়াতেই মূলত এমন হতাশা দেখা দিয়েছে।
ভারতের বহুল আলোচিত দ্যা টেলিগ্রাফ পত্রিকার খবরে প্রথম বলা হয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তা পাড়ে দুটি খাল ও তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প করছে। এলক্ষ্যে এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণেরও উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার।
এ অবস্থায় আসলেই কি হচ্ছে তার জানার চেষ্টা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমনটাই বলছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি শাখার মহাপরিচালক এবং মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যাচাই করা হচ্ছে জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের জনগণের বড় একটি অংশের জীবন ও জীবিকা তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল। তাই বাংলাদেশ বহু বছর ধরে ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তির চেষ্টা করে আসছে।
অন্যদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ভারতকে চিঠি দিবো বিস্তারিত জানতে। আজই আমি চিঠিতে সাইন করে দিবো।
সূত্র জানায়, এ অবস্থায় এক ধরনের হতাশাতেই আছে ঢাকা। কারণ দুদেশের মধ্যে ২০১১ সালে চূড়ান্ত হয়েও ভেস্তে যাওয়া তিস্তা চুক্তি আবার হবে এমন আশাতেই আছে ঢাকা। ঢাকা-দিল্লি প্রায় প্রতিটি বৈঠকেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অন্যতম প্রধান এজেন্ডা হিসেবে তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ আনা হয়।
তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত টানাপোড়েন বহুদিনের। বার বার উদ্যোগ নিয়েও সমাধান হয়নি সমস্যার। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি চূড়ান্ত করেছিল কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় এটি সই হয়নি। তারপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য চায় না বলে কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তি করতে পারছে না এমনটাই বলা হচ্ছে বাংলাদেশকে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের কি করনীয় জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে এম আতিকুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বাংলাদেশ চিঠি দিয়ে জানতে পারে। তারপর কি জানা যায় তার উপর ভিত্তি করে কথা বলতে হবে। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন পড়ে কোন মন্তব্য করা যাবে না। আগে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসুক।
প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও নীরবতা
চীনা অর্থায়নে বাংলাদেশ এই প্রকল্প করতে চায়। প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্পে বাংলাদেশের সীমানার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর ১১৫ কিলোমিটারে ব্যাপক খনন চালিয়ে নদীর মাঝখানের গভীরতাকে ১০ মিটারে বাড়িয়ে ফেলা হবে এবং নদীর প্রশস্ততাকে ব্যাপকভাবে কমিয়ে ফেলা হবে। একই সঙ্গে রিভার ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক ভূমি উদ্ধার করে চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
নদীর দুই তীর বরাবর ১১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে। উপযুক্ত স্থানে বেশ কয়েকটি ব্যারাজ-কাম রোড নির্মাণ করে নদীর দুই তীরের যোগাযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বর্ষাকালে প্রবাহিত নদীর বিপুল উদ্বৃত্ত পানি সংরক্ষণ জলাধার সৃষ্টি করে সেচ খাল খননের মাধ্যমে নদীর উভয় তীরে চাষযোগ্য জমিতে শুষ্ক মৌসুমে সেচের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। নদীর উভয় তীরের সড়কের পাশে ব্যাপক শিল্পায়ন ও নগরায়ণ করার কথাও আছে প্রস্তাবিত প্রকল্পে।
চীন এই প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চেয়েছিল এবং প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করেছে চীন। তারপর আর প্রকল্পটি নিয়ে কোনও কথা শোনা যায়না সরকারের পক্ষ থেকে।
ঢাকায় নিযুক্ত সদ্যবিদায়ী চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সরাসরি অভিযোগ করে গত ডিসেম্বরেই বলেন, বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে আগ্রহী চীন। তবে আমরা বুঝতে পারি, এ প্রকল্প নিয়ে এদেশের ওপর বাইরের চাপ আছে। কেননা এ প্রকল্প ভূরাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর।
তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না করতে কোন দেশ বা কারা চাপ দিচ্ছে সেই বিষয়ে খোলাসা করে কিছু বলেননি লি জিমিং। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারেরও আনুষ্ঠানিক কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
/এএস