ইসি গঠনের জন্য আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
আজ সোমবার (১৭ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস বিফ্রিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব কথা জানান।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘খসড়া আইন অনুযায়ী, একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হবে। ছয় সদস্যের এই অনুসন্ধান কমিটির প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি।’
এ ছাড়া সদস্য হিসেবে থাকবেন হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, মহা হিসাবনিরীক্ষক, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন।
এসব পদের নিয়োগে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। ওই ব্যক্তিদের কমপক্ষে ৫০ বছর বয়স হতে হবে। এ ছাড়া সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে ওই ব্যক্তিদের কমপক্ষে ২০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার কারা হতে হতে পারবেন এবং কারা হতে পারবেননা প্রস্তাবিত আইনের ৫ ও ৬ ধারায় সেটা স্পষ্ট বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনান, প্রধান নির্বাচন কমিশনারবা নির্বাচন কমিশনার হতে হলে তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে। কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা-সরকারী, বেসরকারি বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাহলেই তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন।
আর অযোগ্যতা হচ্ছে, প্রথমত উনি যদি কোন আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হন, যদি দেউলিয়া ঘোষণার পর আদালত থেকে দায়মুক্ত না হন, কোন বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকলে বা কোন বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য থাকলে, (যাদের ডুয়েল সিটিজেনশিপ আছে তারা থাকতে পারবে, কিন্ত সিটিজেনশিপ সারেন্ডার্ড করেছে তারা হতে পারবেন)। নৈতিকভাবে ঙ্খলন হয় এবং সেক্ষেত্রে যদি ফৌজদারি অপরাধে অনুন্য দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক কখনও কোন ভাবে সাজাপ্রাপ্ত হন এবং যদি কেউ রাষ্ট্রীয় পদে থাকে যেমন কেউ একবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকলে তিনি ন্য পদে যেতে পারবেন না। তবে তিনি যদি নির্বাচন কমিশনার পদে থেকে অবসরে যান তাহলে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন।
তিনি বলেন, এর আগে যেসব নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে সেগুলোকে এই আইন দ্বারা নিরাপত্তা দেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রস্তাবিত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে রাষ্ট্রপতি দ্বারা যেসব নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে এই আইনে সেগুলোকে হেফাজত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংলাপ আজ। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আজ বিকেল চারটায় বঙ্গভবনে সংলাপে অংশ নেবে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে এখন পর্যন্ত অংশ নেওয়া ২৩টি দল হচ্ছে জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বিকল্পধারা, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, গণফ্রন্ট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাপ, কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাকের পার্টি ও এনপিপি।
রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), এলডিপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলীম লীগ।
এনএইচবি/এসএ/