১৯২ কেন্দ্রের ফলাফল
৬৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে আইভী নির্বাচিত
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৯২ কেন্দ্রের ফলাফলে বেসরকারি হিসাবে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী । তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট।
অন্যদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ১৯২ কেন্দ্রে পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট।
প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান ৬৬ হাজার ৯৩১ ভোট।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে রবিবার (১৬ জানুয়ারি) রাত ১০টা ৫০ মিনিটে এই ফল ঘোষণা করা হয়।
এ নির্বাচনে দেশের প্রথম নারী মেয়র এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী টানা তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলেন।
অন্যদিকে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ২০১১ এবং ২০১৬ সালে প্রার্থী হওয়ার পরও নির্বাচন বয়কট করেন। যদিও তিনি বলছেন, নিজে থেকে সরে যাননি। বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় তিনি সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবার তিনি ‘জনগণের প্রার্থী’। রাতে এ প্রতিক্রিয়ায় তিনি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে তিনি ইভিএমের ইন্টারনাল মেকানিজমের কারণে তিনি হেরেছেন বলে দাবি করেছেন।
সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি ভোট কেন্দ্রে শন্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে এবার ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনী এলাকায় মোট নিবন্ধিত ভোটার ছিলেন ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬২ জন। এর মধ্যে ২লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন পুরুষ, ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১১ জন নারী এবং তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের ৪ জন। ১৯২টি কেন্দ্রের ১,৩৩৩টি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
নির্বাচনে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।
নারায়ণগঞ্জের এই নির্বাচনকে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোত্তম নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সরেজমিনে ভোট পরিদর্শন শেষে ফিরে নিজের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়র, ৯টি সংরক্ষিত আসনে নারী কাউন্সিলর ও ২৭টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এর আগে, ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি দেশের প্রথম কোনো সিটি করপোরেশনের নারী মেয়র।
২০১১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এরপর ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন তিনি।
কর্মজীবনে চিকিৎসক হলেও রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেয়া এই নারী ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জের পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে নামেন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর তিনি টানা তিনবার মেয়র পদে নির্বাচিত হলেন।
১৯৬৬ সালের ৬ই জুন জন্ম নেওয়া ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভির বাবা নারায়ণগঞ্জের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকা ছিলেন আওয়ামী লীগের স্বনামধন্য নেতা, মা মমতাজ বেগম।
সেলিনা হায়াৎ আইভী ১৯৮৫ সালে রাশিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ওডেসা পিরাগোব মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৯২ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯২-৯৩ সালে ঢাকা মিডফোর্ট হাসপাতালে ইন্টার্নি সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবনে তিনি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত মিডফোর্ট হাসপাতালে এবং ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।
এমপি/জেডএকে/এএস/এপি/