বায়ু, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ঠিক রেখেই উন্নয়ন করতে হবে

ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার এলাকার বায়ু দূষণ ক্রমাগতভাবে চরম উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌছেছে। এই বায়ু দূষণ প্রাণঘাতী এইডস রোগের চেয়েও ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। বায়ু দূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। তাই সারা দেশে অবকাঠামো, ভবন নির্মাণসহ যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যথাযথ মানদণ্ডে প্রকল্প ব্যবস্থাপনাসহ বায়ু দূষণরোধে প্রয়োজনীয় তদারকি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
শনিবার (২৮শে জানুয়ারি) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত ‘রাজধানীর বিপর্যস্ত বায়ু: নগরায়নের বিদ্যমান প্রেক্ষিত ও করণীয়' শীর্ষক ‘আইপিডি নগরায়ন ও উন্নয়ন বিষয়ক পর্যালোচনা’ ওয়েবিনারে এমনই অভিমত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইপিডি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে নীরব ঘাতক বায়ু দূষণের বিদ্যমান ক্রান্তিজনক অবস্থাকে স্বীকার করে বায়ু ও পরিবেশ দূষণের মতো অপরাধকে জনস্বাস্থ্যগত অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে যথাযথ দণ্ড ও শাস্তির বিধান প্রণয়ন করা দরকার। পাশাপাশি দূষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে আইপিডি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নিয়ন্ত্রণহীণ ধূলা, যানবাহনের ধোঁয়া ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির অবাধ চলাচল, মোটরসাইকেলসহ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি, ইটভাটার ধোঁয়া, সড়কের নিয়ন্ত্রণহীণ খোঁড়াখুড়ি, অবকাঠামো ও মেগা প্রজেক্টের নির্মাণযজ্ঞ, শিল্পকারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য, কঠিন বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকার বায়ু দূষণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকার জলাভূমি ভরাট, সবুজ এলাকা ও সবুজায়ন কমে যাওয়া, নিয়ন্ত্রণহীণ অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণ, নগর ও পরিবেশের ভারবহন ক্ষমতার মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা, পার্ক-উদ্যান-খেলার মাঠে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে কংক্রিটনির্ভর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন গতির কারণে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণহীন মাত্রায় চলে গেছে। প্রভাবশালীরা আইনের ঊর্ধ্বে থেকে ব্যবসা বা শিল্প-কারখানা স্থাপন করে পরিবেশকে উপেক্ষা করে নির্বিচারে বায়ু দূষণ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আইপিডি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকার চেয়েও নারায়ণগঞ্জ এলাকার বায়ুমান বিপদজনক মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকার বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইপিডি পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, বায়ূ দূষণে শুধু স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়ই নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় ও জিডিপিও কমে যায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭ থেকে ৮ বছর কমে যাচ্ছে। বায়ূ দূষণকে এইডস এর মত প্রাণঘাতী রোগের চেয়েও ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। তাই সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বায়ু দূষণ কমানো সম্ভব না।
কানাডার সেন্ট মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিষয়ক গবেষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ঢাকার পাশাপাশি রাজশাহী, খুলনার বায়ু দূষণ এর মাত্রাও উদ্বেগজনক।
বাপার যুগ্ম সম্পাদক মারুফ হোসেন বলেন, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে উদাহরণ তৈরি করবার সুযোগ রয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে গ্রীণ হাউস গ্যাস নির্গত হয়ে দূষণ বাড়ছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, বায়ু দূষণের কারণে আমাদের আকাশের উপরিভাগে ‘ডাস্ট ডোম লেয়ার’ তৈরি হচ্ছে, যা আমাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ঝূঁকির কারণ।
উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ মো. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, বায়ু দূষণ রোধে থাইল্যান্ড এর রাজধানী ব্যাংককের মতো ঢাকা ও আশেপাশের শহরে ৩০ ভাগ বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি দূষণ রোধে কলোম্বিয়া, পোল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার, ঘানার মত ব্যক্তিগত গাড়ি কমিয়ে পাবলিক বাসের সংখ্যাও বাড়ানো দরকার।
জেডএ/এএস
