ডিএনসিসির তদন্ত প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে
বর্জ্যবাহী গাড়ির চাপায় মৃত্যু
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একটি বর্জ্যবাহী ডাম্প ট্রাক এবং একটি মোটরসাইকেলের মধ্যে সংঘটিত দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক ও ডিএনসিসি’র চালক উভয়কে দোষী সাব্যস্ত করেছেন তদন্ত কমিটি। এছাড়া বর্জ্যবাহী গাড়ি সন্ধ্যার পর থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত চালানো যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় মোটর সাইকেল আরোহী মো: আহসান কবির খান নিহত হন। মোটর সাইকেল চালক এখনো পলাতক।
তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, হালকা গাড়ির লাইসেন্স নিয়ে ভারী গাড়ি চালানোর কারণে চালক মো: হানিফ (ফটিক) কে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে এবং চালক মো: হানিফ (ফটিক) মোটর সাইকেলটিকে দৃষ্টি গোচর করতে ব্যর্থ হওয়ায় ও ডাম্প ট্রাকটির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুর্ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে বলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে।
এছাড়া মোটর সাইকেল চালক মোটর সাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় আরোহী মোটর সাইকেল থেকে ডানদিকে পড়ে ডাম্প ট্রাকের পিছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হওয়ায় মোটর সাইকেল চালককে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে। ডিএনসিসি নিহতের পরিবারের দেখ ভালের দায়িত্ব নিতে পারে।
সড়ক নিরাপত্তা আইন এবং নিরাপদ গাড়ি চালানোর বিষয়ে ডিএনসিসির চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। চালকদের হালনাগাদ লাইসেন্স থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে। হালকা লাইসেন্সধারীদের দিয়ে ভারী গাড়ী চালানো নিষিদ্ধ করাসহ গাড়ি সমূহের রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস নিয়মিত হালনাগাদ করা ছাড়াও শুণ্য পদের বিপরীতে দ্রুত নতুন গাড়ি চালক নিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি গাড়ির সংখ্যানুপাতে নতুন গাড়ি চালকের পদ সৃজনপূর্বক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
ভারী গাড়ীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলপারসহ কমপক্ষে ভারী গাড়ীতে লাইসেন্সধারী সেকেন্ড সিটার রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। ডিএনসিসির সকল গাড়িতে ড্যাশবোর্ড ক্যামেরা এবং ভিটিএসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সকল গাড়ি ও চালকদের একটি বিভাগের (পরিবহন পুল) এর মাধ্যমে পরিচালনা করাসহ গাড়ি চালকদের অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে এবং বর্জ্যবাহী গাড়ি সন্ধ্যার পর থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত চালানো যেতে পারে।
রাজধানীর তেজগাঁও পান্থপথ এলাকায়২০২১ সালে ডিএনসিসির একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী জনাব আহমেদ কবির নামে ওই ব্যক্তি মারা যান।
বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের সার্থে ডিএনসিসি ওই দিনই কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলামকে (প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা) আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আবুল হাসনাত মোঃ আশরাফুল আলম, ও মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) মোঃ মিজানুর রহমান ।
তদন্ত কমিটি মতামত দিয়ে প্রতিবেদনে বলেছে, স্পষ্ট সিসি ক্যামেরা ফুটেজ কিংবা দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার মূহুর্তের প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় ঘটনাটি সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। পারিপার্শ্বিক এবং নিহতের পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় প্রতীয়মান হয় মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে আরোহী মো: আহসান কবির রাইড শেয়ারিং অবস্থায় ছিলেন। তবে দুর্ঘটনার পরে চালকের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে মোটর সাইকেল চালকের সন্ধান জরুরী। দুর্ঘটনা সংঘটিত গাড়িটির কোন রেজিষ্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না। তবে চালক মো: হানিফ (ফটিক) এর কোন ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল না কিন্তু হালকা গাড়ি চালানোর বৈধ লাইসেন্স ছিল।
ডিএনসিসির নিয়মিত ড্রাইভার বিশেষত ভারী গাড়ি চালকের স্বল্পতার কারণে ড্রাইভার ছাড়াও শ্রমিক/পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে বিভিন্ন বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি চালানো হয়।
পরিবহন, যান্ত্রিক সার্কেল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রদত্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধিকাংশ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট হালনাগাদ নাই। এছাড়াও ডিএনসিসির মোট গাড়ির বিপরীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চালক নাই এবং অধিকাংশ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স হালনাগাদ করা হয় নাই।
ডিএনসিসির পরিবহন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গাড়ি চালকদের জন্য কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নাই এবং বর্জ্যবাহী গাড়িতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োজিত হেলপার বা সেকেন্ড সিটার নাই। তাছাড়া ডিএনসিসির বর্জ্যবাহী গাড়িগুলো বেশিরভাগ সময় দিনের বেলা বর্জ্য পরিবহন করে থাকে।
দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে যেসব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে ডিএনসিসি নিহতের পরিবারের দেখ ভালের দায়িত্ব নিয়েছে। কেন্দ্রীয় পুলের ৪৪টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে প্রদানকৃত ৫৬টি বর্জ্যবাহী গাড়ির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ডিএনসিসি’র নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন করার জন্য মেয়র অনুমোদন দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।
হালকা লাইসেন্সধারী চালকদের ভারী লাইসেন্স প্রদানের জন্য বিআরটিসি’র মাধ্যমে প্রশিক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
ডিএনসিসি মেয়র সকল চালকের উপস্থিতিতে একটি সভার মাধ্যমে সকল চালকদের অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
ডিএনসিসি’র সকল গাড়িতে ড্যাশ বোর্ড ক্যামেরা স্থাপনসহ ভার্চুয়াল পরিবহনপুল গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বর্জ্যবাহী গাড়ি সন্ধ্যার পর থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত চালানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অন্যান্য বিষয়গুলো বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম কমিটির সুপারিশসমূহ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে ডিএনসিসির সকল বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আরেইউ/