‘অধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর বাংলাদেশ সরকার’
অধিকারকর্মী, সাংবাদিক এমনকি শিশুদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২২’ এ কথা বলা হয়েছে। সংস্থার ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ২০২১ সালের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ২০২১ সালে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং গুমের প্রমাণ নিয়ে জাতিসংঘ, দাতা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর উত্থাপিত উদ্বেগগুলোকে খারিজ করে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এইচআরডব্লিউ এর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, বাংলাদেশ সরকার কোভিড-১৯ মহামারিকে ব্যবহার করে একটি ঠাণ্ডা বার্তা দিয়েছে যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করলে শাস্তি দেওয়া হবে। তবু সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী এবং অধিকারকর্মীরা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সেসব বাধাকে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অনেক মানুষ এই প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে ধরেছেন।
প্রতিবেদনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ বলেছেন, স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। গ্রেপ্তার বা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে গণতন্ত্রের আহ্বান এখনো শক্তিশালী রয়েছে। এদিকে স্বৈরাচাররা তাদের পক্ষে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা আরও কঠিন বলে দেখতে পাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের (২০২১) ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদ মারা যান। গ্রেপ্তারের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মোট ছয়বার তার জামিন আবেদন নাকচ হয়। ৯ মাস বিচার পূর্ববর্তী আটকাবস্থার পর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন মুশতাক। ফেসবুকে কোভিড-১৯ নিয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করায় ওই সময় তাকে নির্যাতন করা হয়।
মে মাসে কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে প্রতিবেদন করার পর কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে রাজনৈতিক সমালোচকদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও বিচার করেছে, এমনকি সরকারের সমালোচনাকারী প্রবাসী সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদেরও টার্গেট করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ভাসানচরে বসবাসযোগ্যতা, নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব এবং সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার মূল্যায়নের জন্য অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে সেখানে প্রায় ২০ হাজার শরণার্থীকে স্থানান্তর করে ফেলেছে।
প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার প্রসঙ্গে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা মুহিবুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আশ্রয় শিবিরের একটি ইসলামিক শিক্ষালয়ে হামলায় সাত শরণার্থীকে হত্যা করা হয়েছিল, যার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে ২০২১ সালে দুর্গাপূজার সময় হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িতে হামলা ও হতাহতের ঘটনা, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামিকে খালাস দেওয়ার বিষয়টিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
আরইউ/এমএমএ/