অসম্ভবকে সম্ভব করে এগিয়ে যাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী
১৯৯৬ এর পূর্বে, এমনকি ১৩-১৪ বছর আগেও দেশের উন্নয়ন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। মানুষ মনে করত বাংলাদেশের কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে নবনির্মিত জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, '১৯৯৬ এর পূর্বে, এমনকি ১৩-১৪ বছর আগের বাংলাদেশের কথা চিন্তা করেন, তাহলে বাংলাদেশ কী ছিল? সেই বাংলাদেশের কথা শুনলে মানুষ মনে করত বাংলাদেশের কোনো সম্ভাবনাই নাই। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। যেতে পেরেছি এই কারণে যে, গবেষণালব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করতে পেরেছি। বিভিন্ন পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে পেরেছি। তাই আজ কর্মসংস্থান বেড়েছে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। মানুষ উন্নত জীবন পাচ্ছে। ডেল্টা পরিকল্পনা-১০০ করে দিয়ে গেলাম, যেন এই বদ্বীপটা আগামী দিনে জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়। আমাদের দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে তারা যেন একটা সুন্দর জীবন পায়। সেই লক্ষ্য স্থির করেই আমাদের পদক্ষেপগুলো নেওয়া।'
তিনি বলেন, 'সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছিল। তাদের এই অবৈধ ক্ষমতা বৈধকরণের ক্ষেত্রে তারা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে যায় এবং একটি এলিট শ্রেণি তৈরি করে। তাদেরও নানাভাবে অর্থশালী, সম্পদশালী করে তোলে। ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে এমনিক মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের ব্যবহার করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানী ছিল তখন। সেখানে রাষ্ট্রের বা সাধারণ জনগণের কী প্রয়োজন, সেদিকে তাদের কোনো খেয়ালই ছিল না। ক্ষমতাটাকে ভোগ করা এবং ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। যে কারণে এমনকি ১৯৯১ সালে বা এর আগেও তারা ক্ষমতায় এসেছে। ১৯৯১-৯৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, সেই ১৯৯১ সালেই আন্তর্জাতিকভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারের একটা সুযোগ হয়। তখন বিনামূল্যে এই অঞ্চলে যখন সাবমেরিনক্যাবল এল তখন বিনামূল্যে বাংলাদেশকে অফার দেওয়া হয়েছিল সাবমেরিনক্যাবলে যুক্ত হওয়ার জন্য। এই সাবমেরিনক্যাবল লাইন দক্ষিণ এশিয়া মধ্যপ্রাচ্য হয়ে একটা সংযোগ দেওয়ার সুযোগ আমাদের এলেও আমাদের দুর্ভাগ্য যে তখন বিএনপি সরকার বলে দিল এটা করা যাবে না। এটা করলে নাকি বাংলাদেশের সব তথ্য বিদেশে চলে যাবে। কী যে গোপন তথ্য তাদের ছিল সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমাদের দেশটা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যোগসূত্র করার যে একটা সুযোগ এবং আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার যে একটা সুযোগ এসেছিল বা প্রযুক্তি শিক্ষার মধ্য দিয়ে উন্নয়নের যে সম্ভবনা সেটা নষ্ট হয়ে যায়। সেটা তারা নষ্ট করে দেয়।'
তিনি বলেন, আমরা সরকারে আসার পরই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ট্রেনিংটা যাতে হয়, আমাদের ছেলে-মেয়েরা যাতে শেখে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করি। কম্পিউটার কেনার ব্যাপারে নেদারল্যান্ড আমাদের একটা অফার দিয়েছিল যে, আমরা সেটার অর্ধেক মূল্য আমরা দেব বাকি অর্ধেক মূল্য নেদারল্যান্ড দেবে। কিন্তু একটাই শর্ত যে তাদের দেশ থেকে তাদের কোম্পানি থেকে কিনতে হবে। আমরা রাজী হয়ে যাই। কারণ আমাদের জন্য সেটা খুব ভালো একটা প্রস্তাব ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা পরবর্তীকালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ওদের কোম্পানিটার নাম ছিল টিউলিপের নামে, তখন আমাদের অতীজ্ঞানী তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কেউ বোঝায় শেখ রেহানার মেয়ের নাম টিউলিপ। কাজেই নেদারল্যান্ডের সেই কোম্পানিটাও টিউলিপের। কাজেই ওখান থেকে সেটা নেওয়া যাবে না। তাই তিনি সেটা বাতিল করে দেয়। আর চুক্তি বাতিল করার পর ওই কোম্পানি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেই মামলা পরিচালনা করতে সেখানে অনেক অর্থ ব্যয় হয় এরপর বাংলাদেশ শাস্তি পায় এবং ৬০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। ১০ হাজার কম্পিউটার তো গেলই উল্টা আরও ৬০ কোটি টাকা দিতে হলো একটি দেশের সরকারে প্রধানের সিদ্ধান্তের কারণে। এই ধরনের সরকার প্রধান থাকলে তো এদেশের উন্নতিটা কী হবে? বুঝে দেখেন। আমরা যখন পুনরায় সরকার গঠন করলাম তখন একটা সুযোগ হলো। এখন বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ।'
এসএম/টিটি