স্বাধীনতা সংগ্রামে নুরুল ইসলাম অসামান্য অবদান রেখেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সমাজসেবী, লেখক, সাংবাদিক ও বহুল সমাদৃত গ্রন্থ ‘প্রবাসীর কথা’র লেখক নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি এ শোক জানান।
শোক বার্তায় তিনি নুরুল ইসলামের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪ ও ৫ নম্বর সেক্টরের প্রতিনিধি দেওয়ান ফরিদ গাজীর দপ্তরে ভারতে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর সিলেটে আঞ্চলিক বেসামরিক প্রশাসক দেওয়ান ফরিদ গাজীর অফিসে নুরুল ইসলামের সঙ্গে এক সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নুরুল ইসলাম অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। প্রবাসে থেকেও তিনি সবসময় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করতেন। তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নুরুল ইসলাম লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
নূরুল ইসলাম ১৯৩২ সালের ১ জুন সিলেট সদর থানার সদরখলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সিলেট এমসি কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৫২-৫৩ সালে কলেজ ইউনিয়নের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন এবং ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখেন।
ঢাকায় ভাষা আন্দোলনরত ছাত্রদের গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তৎকালীন গোবিন্দপার্কে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঐতিহাসিক প্রথম সভায় তিনি সভাপতিত্ব করার বিরল গৌরবের অধিকারী।
১৯৫৩-৫৪ সালে তিনি সিলেট মহকুমা (বর্তমান সিলেট জেলা) ছাত্র ইউনিয়নের (ইপসু) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তখন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পাশাপাশি যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। নুরুল ইসলাম ১৯৬৫ সালের ৬ নভেম্বর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলাতে আসেন।
লন্ডনে তিনি ১৯৫৮ সালের আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, ১৯৬৩ সালে ‘ন্যাশনাল ফেডারেশন অব পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন ইন গ্রেট ব্রিটেন’ গঠনের অন্যতম প্রধান এবং ১৯৬৪ সালে ‘ইস্ট পাকিস্তান হাউস’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
১৯৬৬ সালে বাংলাদেশে ভ্রমণকালীন লন্ডনে ইস্ট পাকিস্তান হাউসকেন্দ্রিক পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীনতার নামে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করে তার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়।
ফলে লেখাপড়ার সেখানেই ইতি। তিনি দেশে ৬-দফা আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, এবং শেষ পর্যন্ত ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভারতে তখন ৪ ও ৫ নং সেক্টরের প্রতিনিধি দেওয়ান ফরিদ গাজীর (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন) একান্ত সচিব ছিলেন।
আরইউ/টিটি