মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ঘিরে ধরা নিরাপত্তাহীনতার প্রমাণ: ইউট্যাব

ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিএনপির নিখোঁজ এক নেতার বাড়ি গিয়ে অন্য একটি সংগঠনের নেতাদের তোপের মুখে পড়েন। এটি নিরাপত্তাহীনতার প্রমাণ উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত বুধবার সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে প্রায় এক দশক ধরে নিখোঁজ বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাসার বাইরে সরকার সমর্থিত ‘মায়ের কান্না’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে একদল লোক পিটার হাসকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন। পরে অনিরাপদ বোধ করায় নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় তিনি দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে আসেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে উপপ্রধান মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল এই বিষয়ে উদ্বেগের কথা বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং বিব্রতকর। এই ঘটনা প্রমাণ করে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা কী? দেশে যে নিরাপত্তাহীনতা চলছে এই ঘটনা তারই নমুনা।
দুই শিক্ষক নেতা বলেন, একজন কূটনীতিক একটা বিশেষ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি দলের মদদে ও সহযোগিতায় কিছু লোক আরেক প্রতিষ্ঠানের নাম নিয়ে সেখানে উপস্থিত হওয়াটা বেআইনি। যা গভীর উদ্বেগের বিষয়। কেউ যদি তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান করতে চায় করতে পারে। তবে আরেকটা অনুষ্ঠান গিয়ে সেই অনুষ্ঠানকে বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া অগণতান্ত্রিক ও অগ্রহণযোগ্য। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
তারা বলেন, এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১৮ সালের ৪ আগস্ট সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মোহাম্মদপুরের বাড়িতে নৈশভোজে যাওয়ার পর বের হওয়ার সময় তৎকালিন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা হয়। কিন্তু ওই ঘটনার আজও বিচার হয়নি। ফলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, গত প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সরকার দেশের মানুষকে নানাভাবে চাপে রেখেছে। দেশে ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা মানুষকে ভয় দেখিয়ে যেভাবে গায়ের জোরে দেশ শাসন করছে তেমনিভাবে এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চাইছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে আক্রমণের চেষ্টার ঘটনা প্রমাণ করে যে, ক্ষমতাসীনরা ভয়ভীতির মাধ্যমে বিদেশি কূটনীতিকদেরও চাপে রেখে অব্যাহতভাবে ক্ষমতায় থাকার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
নেতৃদ্বয় বলেন, এমনিতেই বাংলাদেশের জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এখন দেখা যাচ্ছে কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে যে, আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ভালো। তাদের সঙ্গে আমাদের বড় বাণিজ্য আছে। শুধু এই একটি রাষ্ট্র নয়, অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের বহুবিধ সম্পর্ক আছে। বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি বিদেশে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি সেটা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ইউট্যাবের দুই শীর্ষ নেতা বলেন, অথচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকায় গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বলেন যে, বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে নিয়ে আসুন। আর বাংলাদেশে কোথাও গেলে সেই মানুষগুলো তাদের নিরাপত্তা পাবে না- এটা কি হতে পারে? এটা তো এদেশের নিরাপত্তার চরিত্র কেমন সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে। এটা পরিষ্কার যে, সরকারের মদদে ও সহযোগিতায় ঘটনাটা ঘটছে- যা সরকারের মন্ত্রীদের কথা-বার্তায় পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। আমরা গত বুধবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হেনস্তা চেষ্টার নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করছি।
এসএন
