লঞ্চ শ্রমিকদের কর্মবিরতি, যাত্রীদের ভোগান্তি

শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে নেমেছে নৌযান শ্রমিকরা।
শনিবার রাত ১২টা থেকে সারাদেশে এই কর্মবিরতি শুরু হয়। কর্মবিরতির ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কাঁচামাল ও পণ্যবাহী নৌযানের দায়িত্বরতরা ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহন পরিদর্শক হুমায়ূন আহমেদ বলেন, রাতে থেকে বিভিন্ন রুটের ৩৫টি লঞ্চ সদরঘাটের পন্টুনে ভিড়েছে। সকাল থেকে ১০টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল চাঁদপুর ও ইলিশায়, একটাও ছেড়ে যায়নি। শুধু সকালে একটি লঞ্চ ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে।
রবিবার (২৭ নভেম্বর) সদরঘাট টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, ফাঁকা পড়ে আছে পল্টুন। লঞ্চগুলো রাখা হয়েছে শ্যামবাজার ঘাটে। নেই চিরচেনা হাকডাক, ফাঁকা সদরঘাট। বিভিন্ন জায়গায় উদ্দেশে যাওয়ার জন্য এসে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। সদরঘাট থেকে বিকল্প হিসেবে অনেকেই পিকাপ ও মাইক্রো করে বাড়ি যাচ্ছে। গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
সদরঘাট থেকে চাদপুর মাইক্রো ভাড়া নিচ্ছে জনপ্রতি ৭০০-৯০০ পিকাপ নিচ্ছে ৩০০-৫০০ টাকা।
এদিকে রবিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে পুরান ঢাকার বাংলাবাজারে বিক্ষোভ সমাবেশ করে নৌ-শ্রমিকরা। সমাবেশে নৌযান শ্রমিক নেতারা বলেন, আমাদের দাবি ন্যায্য দাবি। এই বেতনে এখন সংসার চালানো যায় না। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার ষড়যন্ত্র চলছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মীদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব আতিকুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘নৌযান শ্রমিকদের ১০ দফা দাবিতে চলমান কর্মবিরতিতে সারাদেশের নৌযান শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন, শতভাগ শ্রমিক অংশ নিয়েছেন। আমাদের যৌক্তিকতা দাবি, দাবিগুলো মেনে নেওয়া হলে আমরা কর্মসূচি তুলে নেব।’
লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘লঞ্চ না চললে আমাদেরও লস, তাদেরও লস। এখনো বসা হয়নি। আমরা চাচ্ছি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণের বিষয়টি দেখবার দায়িত্ব শ্রম অধিদপ্তরের। ফলে অধিদপ্তর বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছেন।’
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নৌযান শ্রমিকদের বেতন সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিংপাস, বাল্কহেডের রাত্রীকালীন চলাচলের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল, বাংলাদেশের বন্দরসমূহ থেকে পণ্যপরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রোতাশ্রয় নির্মাণ ও চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধ, কর্মস্থলে ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন এবং বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ১০০ ভাগ কার্যকর করতে হবে।
এমবি/এমএমএ/
