স্যানিটেশন প্রকল্পে অহেতুক ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন

দেশের ২৫ জেলায় পাবলিক টয়লেট স্থাপনসহ নিরাপদ স্যানিটেশনের একটি প্রকল্পে অহেতুক ব্যয়ের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই প্রশ্ন তোলা হয়।
জানা গেছে, দুই হাজার ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাবলিক টয়লেট স্থাপনসহ ২৫টি জেলা শহরের পৌরসভায় নিরাপদ স্যানিটেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সালের জুন পর্যন্ত।
এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভায় যাচাই-বাছাই করার সময় উঠে এসেছে বেশ কিছু অনিয়ম ও অযৌক্তিক ব্যয়ের খাত। এসব খাত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পিইসি।
পিইসি যেসব খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-অনুদানের টাকায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। আবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা খাতে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সাপ্লাই ও্ সার্ভিস খাতেও সাত কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রকল্পের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দক্ষতা উন্নয়নে ৮ কোটি টাকা করে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এসব ব্যয়ের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে সবার জন্য স্যানিটেশনের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ বিশেষ ২৫ জেলা শহরের পৌরসভায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের ব্যাপারে পিইসি সভায় আপত্তি বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুর রহমান বলেন, ডেপুটি প্রকল্প পরিচালক হিসেবে শিশির কুমার বিশ্বাসকে নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি সব কিছু বলতে বলতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে চাইলে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইডে শিশির কুমার বিশ্বাসের কোনও নাম ও মোবাইল নম্বর না পাওয়ায় মন্তব্য জানা যায়নি।
পরিকল্পনা কমিশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সকলের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। দি বিল অ্যান্ড ম্যালিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ( বিএমজিএফ) এর অনুদানে ফিজিবিলিটি ফর ইমপ্লিমেন্টিং সিস্টেম ইন ৫৩ জেলা পর্যায়ে পৌরসভা এবং ৮ সিটি করপোরেশন শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় স্যানিটেশন, কঠিন ও পয়-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে জনস্বাস্থ প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করে। তার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের ২৫টি জেলা শহরে অন্তর্ভুক্তমূলক স্যানিটেশন প্রকল্প তৈরি করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জানা গেছে, দুই হাজার ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের মধ্যে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। বাকি অর্থের যোগান দেওয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। চলতি অর্থবছরে এটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও প্রক্রিয়াকরণের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।
দেশের ৮ বিভাগের ২৫ জেলার যেসব পৌরসভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- ঝালকাঠি পৌরসভা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, শেরপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নিলফামারি, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও পৌরসভা এবং সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ পৌরসভা।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের ২৫টি জেলা শহরের সদর পৌরসভায় নিরাপদ স্যানিটেশন বাস্তবায়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মাধ্যমে শহরের পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবন মান উন্নয়ন।
প্রকল্পের আওতায় ১৬ হাজার ৩১২টি হাউজহোল্ড টয়লেট, এক হাজার ৩৫০টি কমিউনিটি টয়লেট, ১২০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ৩৪৭ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন ও ১০০ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ, ২০টি উৎপাদক নলকূপ নির্মাণ করা হবে। এর বাইরে আরও কিছু কাজ রয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়।
জানা গেছে, সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পিইসি সভায় প্রকল্পের বিভিন্ন খাতের যে ব্যয় প্রাক্কল করা হয়েছে তা নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন প্রশ্ন তুলেছে। এর মধ্যে প্রকল্পের আওতায় ডিজাইন, সুপার ভিশন ও রিপোটিং কার্যক্রমের জন্য পরামর্শক খাতে ৩৮ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। একইভাবে একবার সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করার পর আবারও একই খাতে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা, সাপ্লাই ও সার্ভিস খাতে প্রায় সাত কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এসব ব্যয়ের ভিত্তির ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে পিইসি সভায়।
এ ছাড়াও প্রকল্পের সচেতনতা বৃদ্ধিতে ৮ কোটি টাকা ও দক্ষতা উন্নয়নে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পিইসি।
পিইসি বলছে, প্রকল্পের এসব দিক সংশোধন করে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব ( ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপনা করা হবে।
এনএইচবি/এসআইএইচ
