ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং কেড়ে নিল ১১ প্রাণ
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সারাদেশের অন্তত ১১ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। এর মধ্যে ভোলায় চারজন, কুমিল্লায় তিনজন, সিরাজগঞ্জে দুইজন এবং বরগুনা ও নড়াইলে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর থেকে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোর পর্যন্ত এ প্রাণহানি হয়।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ও মূল কেন্দ্র রাত ৯টায় উপকূলে আঘাত হানে। কিন্তু এদিন দুপুর থেকেই দমকা হাওয়া দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে শুরু হয়। এ সময় নড়াইলের লোহাগড়ায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে গাছের ডাল পড়ে মারা যান মর্জিনা বেগম (৪০) নামে এক নারী। তার বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার অর্জনবাহার গ্রামে। তার ১১ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।
ভোলায় সোমবার রাত ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের দমকা হাওয়ায় গাছের চাপায় বিবি খাদিজা (৬৮) নামে এক নারী মারা যান। ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়ায় গাছচাপায় মফিজুল ইসলাম নামে এক যুবক মারা যান। এ ছাড়া জেলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানা এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের সময় মোটরসাইকেলে করে দুজন যাওয়ার সময় গাছের ডাল পড়ে ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। অপরজন আহত হন। নিহত ব্যক্তির নাম মো. মাইনুদ্দিন (৪৫)। তিনি পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী, বাড়ি চরফ্যাশনের হাজারিগঞ্জ এলাকায়।
এদিকে বরগুনার সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় একটি ঘরের চালে গাছ পড়লে ওই ঘরে থাকা আমেনা খাতুন নামের এক নারী মারা যান। সোনাখালী এলাকার সমাজকর্মী এনামুল হক ওরফে শাহীন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে নিহত আমেনা খাতুনের বয়স ১০০ বছরের বেশি। ওই নারী রাত ৮টার দিতে ঘরের ভেতর খাবার খাচ্ছিলেন। ঝড়ের সময় একটি গাছ তার ঘরের উপর পড়ে। এ সময় চাপা পড়ে তিনি মারা যান।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় বসতঘরের ওপর গাছ পড়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় সাফিয়া খাতুন (৬৫) নামে এক নারী মারা গেছেন।
সোমবার সন্ধ্যার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল হাসান সোহেল।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় সোমবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখাল পশ্চিমপাড়ায় ঘরের উপর গাছ পড়ে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন— হেসাখাল পশ্চিমপাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার এবং তাদের চার বছরের শিশুসন্তান নুসরাত আক্তার।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল ঢেউয়ে সিরাজগঞ্জে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত ৯টার দিকে জেলা সদরের সয়দা ইউনিয়নের মোহনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন— মোহনপুর গ্রামের খোকন হোসেনের স্ত্রী ও শিশুসন্তান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বৃষ্টি ঝরিয়ে শক্তি হারিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এতে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৭ও ৬ নম্বর বিপৎসংকেত কমিয়ে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে।
আরএ/